দেশজুড়ে

অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ অপারেশন

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট দীর্ঘদিনের। ২৪ জন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসা দিচ্ছেন মাত্র ৯ জন। এছাড়াও হাসপাতালটিতে নেই অ্যানেসথেশিয়া, চক্ষু, নাক-কান-গলাসহ গুরুত্বপূর্ণ রোগের চিকিৎসক। গুরুতর রোগী আসলে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা সদর কিংবা ঢাকায়। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

Advertisement

সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের মুলফুৎগঞ্জ এলাকায় চালু করা হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। পদ্মা নদীর তীরবর্তী হওয়ার নদীভাঙনের কবলে পড়ে হাসপাতালটির কিছু অংশ বিলীন হয়েছে আগেই। বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রতিদিন ১৪টি ইউনিয়নের কমপক্ষে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ২৪টি পদ রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ৯ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া বাকি ১৫টি পদ শূন্য। জুনিয়র কনসালটেন্টের ১৩ পদের মধ্যে হাড়-জোড়া বিশেষজ্ঞ, শিশু কলকনসালটেন্ট, নাক-কান-গলা, চক্ষু, হৃদরোগ, চর্ম ও যৌন, অ্যানেসথেশিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি পদে নেই কোনো চিকিৎসক। এছাড়াও হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদটিও শূন্য।

এদিকে হাসপাতালে সার্জারি চিকিৎসক থাকলেও অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক না থাকার কারণে সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের এমন ভঙ্গুর দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও রোগীরা।

Advertisement

মুলফুৎগঞ্জ এলাকার ষাটোর্ধ্ব ফজলুল বেপারী দীর্ঘদিন ধরে তিনি চোখের সমস্যায় ভুগছেন। প্রথম প্রথম বেশ কয়েকদিন চিকিৎসকের খোঁজ করতে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলেও, পরে চিকিৎসা নেই জানতে পেরে চলে যান ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি প্রতিনিয়ত ঢাকায় যাতায়াত করে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এতে খরচের পাশাপাশি বেড়েছে সময়ও। উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

জানতে চাইলে ফজলুল বেপারী বলেন, আমার এই চোখের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে। বাম চোখে একদম দেখি না। ডান চোখে যা দেখি সামান্য। আমি প্রথম এই নড়িয়া হাসপাতালে এসেছিলাম, পরে ডাক্তার নেই জানতে পেরে ঢাকার ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করাই। এতে আমার অনেক খরচ বেড়ে গেছে। নড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও নেই। আমরা দ্রুত এই হাসপাতালে চোখের ডাক্তার চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা ঈশান বেপারীর ক্ষোভও হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকা নিয়ে। তিনি বলেন, আমাদের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক রোগের চিকিৎসক নেই। সাধারণ হাতভাঙা নিয়ে আসলেও ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। এছাড়াও সরকারিভাবে নাপা আর প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধের সুবিধা পাই না। এক কথায় আমরা সেবামূলক কোনো চিকিৎসা এখান থেকে পাই না। আমরা চাই দ্রুত সকল চিকিৎসক এখানে নিয়ে আসা হোক, তাহলে আমাদের সকলের ভোগান্তি দূর হবে।

এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুল জমাদ্দার বলেন, আমাদের পুরো উপজেলাজুড়ে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। হাসপাতালে অন্যান্য স্টাফের পদ শূন্য থাকায় এখানে চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে আমরা এখানে গাইনি চিকিৎসক, সার্জারি চিকিৎসক, অপারেশন থিয়েটার ও অ্যানেসথেশিয়া মেশিন থাকা সত্ত্বেও অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক নেই। যার জন্য সার্জারি করা ব্যাহত হচ্ছে। আমি এই ব্যাপারে একাধিকবার চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তবে এখনো চিকিৎসক পাইনি। আমি মনে করি খুব দ্রুত এই শূন্য পদগুলো পূরণ করা খুবই জরুরি।

Advertisement

এফএ/জেআইএম