দেশজুড়ে

সাপ ধরে বনে অবমুক্ত করাই তারেকের নেশা

‘সাপ অতি সুন্দর একটি প্রাণী। যেচে বিরক্ত না করলে এটি কারো তেমন ক্ষতি করে না। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের মনস্তত্ত্ব হচ্ছে বিষধর বা বিষহীন যেকোনো প্রকার সাপ দেখলেই সেটি মেরে ফেলতে হবে। অথচ প্রকৃতিতে ও কৃষিকাজে সাপের গুরুত্ব আমরা অনুধাবনই করতে পারি না।’

Advertisement

কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ‘সাপের বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত তারেক আজিজ (২২)। সাপ দেখলে সবাই মেরে ফেলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অথচ সাপকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এই যুবক। সাপ ধরে বনে অবমুক্ত করা যেন তার নেশা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই সাপ দেখলে মায়া হতো তারেক আজিজের। সাপ মারতে দেখলেই প্রাণে জাগতো হাহাকার। বয়স কম হওয়ায় সব জায়গায় প্রতিবাদ করার সাহস হতো না তখন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপ রক্ষার পথ খুঁজতে থাকেন। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৪ নম্বর ধুম ইউনিয়নের উত্তর ধুম গ্রামের এই তরুণ নিজ এলাকায় এখন পরিচিত ‘সাপের বন্ধু’ নামে। বর্তমানে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের একজন দক্ষ কর্মী তিনি।

তারেক আজিজ চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। ফেনীর জয়নাল হাজারি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গত এক বছরে তিনি মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন বিভিন্ন জাতের ১৫টি সাপ। এছাড়া বিপদগ্রস্ত অন্যান্য প্রাণী রক্ষায়ও কাজ করেন তারেক আজিজ।

Advertisement

তারেক আজিজ জানান, সাপের বিষয়ে জানতে কয়েক বছর আগে তিনি যুক্ত হন ‘সাপ সমস্যা প্রতিকার’ নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গে। সেখানে সাপ উদ্ধার ও রক্ষা সম্পর্কে নানা বিষয়ে জানাশোনা হয় তার। পরে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হন। সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হয়ে সাপ উদ্ধার ও রক্ষায় কাজ করছেন তারেক। সেখান থেকে তিন মাসের একটি অনলাইন প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।

উত্তর ধুম এলাকার বাসিন্দা মো. দিদারুল আলম বলেন, তারেক আজিজ মিরসরাইয়ে সাপের বন্ধু হিসেবে একনামে পরিচিত। বসতবাড়িতে বিষধর সাপ দেখা গেলে সব জায়গায় তার ডাক পড়ে। তার কার্যক্রম থেকে এলাকার মানুষও অনেক সচেতন হয়েছেন। ইদানিং রাসেলস ভাইপারের কারণে লোকজন সাপ দেখলে আতঙ্কিত হয়ে তাকে খবর দেয়।

সাপের বিষয়ে এত আগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারেক আজিজ বলেন, শুরুতে এ কাজে পরিবার থেকে বাধা পেয়েছিলাম। সমাজের মানুষও বাঁকা চোখে দেখত। তবে দিন দিন ধারণা বদলেছে মানুষের। স্নেক রেসকিউ টিমের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান ভাই আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। সবাইকে অনুরোধ করবো, সাপ দেখলেই মেরে ফেলবেন না। বিষধর সাপ হলে আমাদের খবর দিন। আমরা বিনামূল্যে সাপের বিপদ থেকে মুক্ত করবো আপনাদের।

স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিরসরাইয়ের তারেক আজিজ আমাদের সংগঠনের একজন আগ্রহী কর্মী। তার কাজ সবার কাছে প্রশংসিত। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের ৪০টি জেলায় আমাদের ২০০ সক্রিয় কর্মী রয়েছেন। সারাদেশে এ বছর আমাদের সাপ উদ্ধারের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। তারেক আজিজের মতো কর্মীরাই আমাদের আন্দোলনের শক্তি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, কেউ সাপ দেখলে মারবেন না, সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। না মেরে আমাদের সদস্যদের খবর দিলে তারা ধরে বনে অবমুক্ত করবে।

এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/জেআইএম