বাংলাদেশে ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। এজন্য কোরিয়া সরকারের ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান কোরিয়া রিয়েল এস্টেট বোর্ড (আরইবি) একটি ধারণাপত্র প্রস্তাব করেছে।
Advertisement
সোমবার (২৯ জুলাই) ভূমি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ভূমি মূল্যায়ন পদ্ধতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সেই প্রকল্প ধারণাপত্র পর্যালোচনা করার জন্য এক সেমিনারের আয়োজন করে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত ১০ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার ডিজিটাল সার্ভে বিশেষজ্ঞরা ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এলে তারা বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ পরিচালনার পাশাপাশি ভূমি মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা ভূমিমন্ত্রীকে জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভূমি মূল্যায়ন হলো সম্ভাব্য সব বিষয় বিবেচনা করে বাজারে জমির অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া, যা ক্রয়, বিক্রয়, করারোপণ, উন্নয়ন, বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনার মতো বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ভূমি মূল্যায়ন ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য ন্যায্য লেনদেন এবং স্থিতিশীল পরিকল্পনা গ্রহণ নিশ্চিত করে।
Advertisement
মূলত ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন কর এবং খাসজমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত ভূমি মূল্যায়ন জটিলতা নিরসনের জন্য ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন পদ্ধতি উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে কোরিয়া থেকে। বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিবন্ধন অধিদপ্তর মৌজা মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে জমির মূল্য এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজ আওতাভুক্ত সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করলেও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উল্লিখিত তিন ক্ষেত্রে তা প্রায়ই পূর্ণাঙ্গ সহায়ক হয় না এবং এছাড়া প্রচলিত মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতিটিও ডিজিটাল নয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় দেশের ছয়টি অঞ্চল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ইডিএলএমএস প্রকল্পের আওতায় চলমান বিডিএস কার্যক্রম শেষ হলে এর ডিজিটাল ক্যাডাস্ট্রাল ডাটাবেজের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক পর্যায়ে এই ছয় অঞ্চলের জন্য ডিজিটাল ভূমি মূল্যায়ন পদ্ধতি উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, কার্যকর ভূমি মূল্যায়ন ব্যবস্থা ভূমি সম্পর্কিত লেনদেনকেই সহজ করে তুলবে না, বরং কর সংগ্রহ, পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ার দক্ষতাও বাড়িয়ে তুলবে। তারা মনে করেন উন্নত ভূমি মূল্যায়ন কৌশল গ্রহণ ভূমি সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ন্যায্য ও নির্ভরযোগ্য ভিত্তি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।
সেমিনারের অন্যতম ফোকাস ছিল জমি মূল্যায়নে আধুনিক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের একীকরণ। অংশগ্রহণকারীরা ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা (জিআইএস), মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন প্রযুক্তি, রিমোট সেন্সিং এবং ড্রোনের কার্যকর ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা প্রযুক্তিগুলোর সাহায্যে ভূমি মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে নির্ভুল, স্বচ্ছ এবং দক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা জানান।
Advertisement
কোরিয়ার বিশেষজ্ঞরা ভূমি মূল্যায়ন ব্যবস্থায় এ জাতীয় প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, কোরিয়া ছাড়াও তানজানিয়ায় তারা সফলতার সাথে ভূমি মূল্যায়ন ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন। তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট চাহিদা ও শর্ত বিবেচনায় বাংলাদেশেও অনুরূপ একটি সিস্টেম গড়ে তোলার ব্যাপারে তারা এ সময় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে ভূমি মূল্যায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা হয়। বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম ব্যবহার, প্রতিস্থাপন, সরবরাহ ও চাহিদা এবং প্রত্যাশা সহ জমির মূল্যায়নের নীতিগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। সেমিনারে ভূমি মূল্যায়নের চ্যালেঞ্জ যেমন তথ্যের প্রাপ্যতা এবং গুণমান, বাজারের গতিশীলতা এবং নৈতিক ও পেশাদার মান নিয়েও আলোচনা করা হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আজকের সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।
আরএমএম/এমআরএম/এমএস