দেশজুড়ে

অসংখ্য পায়ের ছবি শনাক্ত, সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে বলে ধারণা

সুন্দরবনের দুই বিভাগেই ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘশুমারি সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে পর্যালোচনা। অনলাইনে এই কাজ করতে হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন অনলাইন সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় জরিপ পর্যালোচনার কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। এ কারণে জরিপের ফলাফল ঘোষণাও পিছিয়ে নেওয়া হয়। আগামী মাসের যেকোনো সময় এই শুমারির ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement

বন বিভাগ বলছে, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে এবার বাঘের ছবি বেশি পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বাঘ আগের তুলনায় বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ২০১৮ সালের জরিপে ১১৪টি বাঘ শনাক্ত হয়। ২০২৩ সালের মার্চে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে বাঘ জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিং শেষ হয়। আর নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের পূর্ব অংশে ক্যামেরা ট্রাপিং শুরু হয়ে ২০২৪ সালের শুরুতে শেষ হয়। এখন চলছে জরিপ পর্যালোচনার কাজ।

বন বিভাগের তথ্য বলছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালের জরিপে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০-৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বভিাগ। ১৯৯৩ সালে বনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চালানো হয় প্যাগমার্ক জরিপ। ওইসময় জানা যায়, ৩৬২টি বাঘ রয়েছে সুন্দরবনে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

বিশ্বের ৭৫ শতাংশ বাঘের বাস এখন ভারতে, বেড়েছে নেপাল-ভুটানেও ‘বাঘের অস্তিত্ব রক্ষা না হলে সুন্দরবন বিপন্ন হবে’

২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ৪৪০টি। এরপর ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০-৪০০টি। ওইসময়ে পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে বাঘ গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপিং জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার ক্যামেরা ট্র্যাপিং হয়। তখনকার জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা উঠে আসে ১১৪টি।

তথ্য বলছে, ২০০১-২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১০টি, পিটিয়ে মারা হয়েছে ১৪টি এবং ২০০৭ সালে সিডরে মারা গেছে একটি। বাকি ২৫টি বাঘ হত্যা করেছেন চোরা শিকারিরা।

বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, বাঘের প্রায় সাড়ে সাত হাজার ছবি পাওয়া গেছে। একই বাঘের ছবি পাওয়া গেছে বহুবার। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি বাঘের ‘ইউনিক আইডি’ করা হয়েছে। এসব ছবি বিশেষজ্ঞদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা সেগুলো বিশ্লেষণ করছেন।

Advertisement

তিনি বলেন, এবারের শুমারিতে সুন্দরবনের অন্য তিনটি রেঞ্জের মতো খুলনা রেঞ্জেও বাঘের অনেক ছবি পাওয়া গেছে। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি বাঘের বাচ্চার ছবি পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করছি, বাঘ আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে সংখ্যা কত, তা জানাতে কয়েকদিন সময় লাগবে। ‘এবারের বাঘ দিবসে (২৯ জুলাই) শুমারির তথ্য প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে সব কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। সেজন্য আগামী মাসে ফল ঘোষণা করা হবে’, যোগ করেন বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।

আলমগীর হান্নান/এসআর/এমএস