চট্টগ্রামে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এসময় ২০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
Advertisement
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
সারাদেশে কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সমবেত হন প্রায় একশ শিক্ষার্থী। এসময় তারা দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘আমার ভাই মরলো কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ সহ নানান স্লোগান দেন। এছাড়াও বিভিন্ন দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ সদস্যরা কয়েকদফা শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পৌনে চারটার দিকে শিক্ষার্থীদের একজনকে আটক করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রিজন ভ্যান ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। একই সময়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি চলতে থাকে।
বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা কদমরসুল মাদরাসার সামনে বসে নানান স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আন্দরকিল্লা ও অপর একটি অংশ বাংলা কলেজ হয়ে চকবাজারের দিকে চলে যায়।
আরও পড়ুন
বিক্ষোভকারীদের জড়ো হওয়ার চেষ্টা, আটক ২০ ঢাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ, সারাদেশে বিজিবির টহলশিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে আহত হন দুই সংবাদকর্মী ও পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শক।
Advertisement
তারা হলেন- ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ফটো করেসপন্ডেন্ট রাজিব রায়হান, চ্যানেল২৪ এর ক্যামেরা পারসন আবু জাবেদ, কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন ও বোরহান।
পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও টিয়ারশেলের আঘাতে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত হতে দেখা গেছে। তবে তাৎক্ষণিক তাদের নাম জানা যায়নি।
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল তিনটায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভের ডাক দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম। এর পরপরই নগরের চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, জামালখান ও চেরাগী পাহাড় এলাকায় সেনা, বিজিবি ও পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য অবস্থান নেন।
দুপুর একটা থেকে পুলিশ প্রেস ক্লাব এলাকায় পথচারীদের তল্লাশি শুরু করে। বিকেল তিনটার দিকে জামালখান ও প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে চারজনকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
পরে সাড়ে তিনটার দিকে চেরাগী পাহাড় মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একই সময় ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের নেতৃত্ব মিছিল শুরু হয়। এসময় পুলিশ দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নেয়। একই সময়ে কয়েকজন ছাত্রকে পুলিশ আটকের চেষ্টা করলে ছাত্রীরা বাধা দেন। শুরু হয় পুলিশ - শিক্ষার্থী ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
নাজিয়া সুলতানা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অথচ পুলিশ ছাত্রদের গ্রেফতার করেছে।’
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমরা সরিয়ে দিয়েছি। এসময় পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।’
আটক শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- চট্টগ্রামের সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন (২২) ও বাকলিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আজমাইন করিম নিহাল (১৭), আইন কলেজের শিক্ষার্থী নজরুল (২০) ও গাছবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজের জুলহাস হোসেন (২০)।
এএজেড/কেএসআর/এএসএম