দেশজুড়ে

হতাশ পেয়ারাচাষিরা

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন ঝালকাঠির পেয়ারাচাষিরা। এমনিতেই এবছর ফলন কম হয়েছে। তারপরও হতাশার পরিবর্তে ন্যায্য দামের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। কিন্তু সে আশায় যেন গুড়েবালি। পাইকার, ক্রেতা ও পর্যটক সংকটে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমবেশি সব জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পেয়ারা চাষ হলেও বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বরিশালের বানারীপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠির ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর এবং স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামে ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।

Advertisement

ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়কাঠি, জগদীশপুর, মীরকাঠি, শাখাগাছি, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর গ্রামে বৃহৎ অংশজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। তবে এবার গাছগুলোতে দেরিতে ফুল এসেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় সেই ফুল অনেকটাই ঝরে পড়েছে। তার ওপর দেশের পরিস্থিতি পেয়ারাচাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

স্থানীয় চাষীরা জানান, আনুমানিক ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছিন্নভাবে আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হয়েছে পেয়ারার বাণিজ্যিক আবাদ। এ আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছরে অন্তত ১৯৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার আবাদ হয়েছে। পঙ্কজ বড়াল নামের একজন পেয়ারাচাষি বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পর্যটক ও পাইকারদের আনাগোনা বেড়েছে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই দেশের অবস্থা ভালো না হওয়ায় পাইকার, ক্রেতা ও পর্যটক আসছে না। ফলে পেয়ারার চাহিদা তুলনামূলক অনেক কম। ন্যায্য দাম তো দূরের কথা, নামমাত্র মূল্যেও বিক্রি করতে পারছি না। লাভ তো দূরের কথা, আসল খরচের টাকাই ওঠে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

কৃষক দেবব্রত হালদার বিটু বলেন, ‘পেয়ারা আমাদের মৌসুমি আয়ের একমাত্র অবলম্বন। পেয়ারার ফলন ভালো হলে আমাদের সচ্ছলতা আসে। তবে এবার পাইকার, পর্যটক নেই। বাজারের যে অবস্থা তাতে গাছ থেকে পেয়ারা পাড়তে ইচ্ছা করে না।’

Advertisement

আরেক চাষি বিপুল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা সংসারে তিনজন পুরুষ পেয়ারা বাগানের পরিচর্যাসহ সব ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকি। বছরের এ মৌসুমটায় আমাদের আয় দিয়ে সারা বছর সংসার চলে। এবছর ফলন কম হয়েছে। তার মধ্যে কোটা আন্দোলন। যদি ন্যায্য দাম না পাই তাহলে মৌসুমের তিনমাসই সংসার চালানো দুঃসাধ্য হবে। বাকি সময়টাতে কীভাবে চলবো তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।’

সুজন হালদার শানু পেশায় একজন পর্যটন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, পেয়ারা মৌসুমকে ঘিরে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক আসেন। আগে শুধু নৌপথে আসতেন। এখন সড়কপথ ভালো হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই যাতায়াত সম্ভব। এ কারণে পর্যটকদের সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়ছে। তবে এবছর দেশের যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে তেমন পর্যটক বা দর্শনার্থী আসবে বলে মনে হয় না।

পেয়ারাচাষি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভবেন হালদার বলেন, শ্রাবণ মাসের শুরু থেকেই পাকা পেয়ারার মৌসুম শুরু হয়। আর এখনই কোটা আন্দোলনের নামে দেশে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এজন্য পাইকার, ক্রেতা, পর্যটক আসছে না বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে খরচ পোষানোই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার অবলম্বন। এবার বৃষ্টিপাত তেমন না হওয়ায় ফুল কিছুটা ঝরে গেছে। তারপরও যা আছে তার ঠিকমতো ন্যায্য দাম পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু কোটা সংস্কারের নামে দেশের বর্তমান অবস্থার কারণে পাইকার, ক্রেতা, পর্যটক না আসায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে চাষি-ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

আতিকুর রহমান/এসআর/এমএস