আইন-আদালত

‘আপনি ইউকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্র্যাকটিস করুন’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহসীন রশিদ ও প্রবাসী সাংবাদিক কনক সরওয়ারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

Advertisement

একই সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২৯ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই সময় পর্যন্ত আইনজীবী মহসীন রশিদ সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশা পরিচালনা করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার (২৮ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে ছিলেন আইনজীবী মহসীন রশিদ।

শুনানিতে আইনজীবী মহসীন রশিদের উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের আইন, বিচারব্যবস্থার পক্ষে আপনার কথা বলা। কিন্তু তা না করে ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থার পক্ষে আপনি কথা বলেছেন। একবারও বলেননি একটি স্বাধীন দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে ব্রিটিশ আদালত এভাবে বলতে পারেন না।’

Advertisement

জবাবে আইনজীবী মহসীন রশিদ বলেন, ‘আমি শুধু ব্রিটেনের উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে কথা বলেছি। যে রায়ে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ত্রুটি ধরা হয়েছে এবং সমালোচনা করা হয়েছে।’

একপর্যায়ে আইনজীবী মহসীন রশিদ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ‘আমাকে আইন পেশা পরিচালনা থেকে বিরত রাখবেন না।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি ইউকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্র্যাকটিস করুন। সেখানে বড় বড় বিচারপতি রয়েছেন। আমরা তো ক্ষুদ্র মানুষ।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন আমাদের জুডিসিয়ারি কিন্তু ছোট নয়।’

Advertisement

আদালত এদিন আইনজীবী মহসীন রশিদের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে আদেশ দেন। এছাড়া আদালত অবমাননার অভিযোগ আসা টকশোর ভিডিও কনটেন্ট অপসারণের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে জানানো হয়েছে বলে আদালতকে জানান বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা ই রাকিব।

এ সময় আদালত কক্ষের ডিজিটাল স্ক্রিনে কনক সরওয়ারের ওই টকশোর কিছু কিছু অংশ প্রদর্শন করা হয়।

পরে আদালত পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২৯ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

আরও পড়ুন

সাংবাদিক কনক ও আইনজীবী মহসীনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ কনক সারোয়ার-মেজর দেলোয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আইনজীবী মহসিন রশিদ ও বাদলের বিষয়ে আদেশ ২৯ আগস্ট

এ বিষয়ে আইনজীবী মহসীন রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত আমাকে বলেছেন- আমাদের আদালতের বিষয়ে আপনি ডিফেন্ড করেননি। ওরা যেটা বলেছে সেটা সমর্থন করেছেন।’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বলেছি তা সতর্কবাণী। এটা ওপেন হবে। সরকার পরিবর্তন হলে এটা আদালতে আনা হবে।’

সাংবাদিক কনক সরওয়ার ও আইনজীবী মুহাম্মদ মহসীন রশিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদন করেন শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। এ আবেদনের বিষয়ে গত ২৬ জুন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের চেম্বার জজ আদালত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।

গত ৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ায় তার ব্যাখ্যা দিতে আইনজীবী মহসীন রশিদ ও সাংবাদিক কনক সরওয়ারকে তলব করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে অনলাইন থেকে প্রবাসী সাংবাদিক কনক সরওয়ার ও আইনজীবী মহসীন রশিদের টকশোর ভিডিও অপসারণ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে যুক্তরাজ্যের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার সুযোগ দিয়ে রায় দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট।

এই রায় নিয়ে গত ২১ জুন সাংবাদিক কনক সরওয়ার পরিচালিত টকশোতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহসীন রশিদ বাংলাদেশের আদালত ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ আনা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড পান চৌধুরী মুঈনুদ্দীন। পরে ২০১৯ সালে মুঈনুদ্দীনের ফৌজদারি অপরাধের বিবরণসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল সেই প্রতিবেদন তখনকার টুইটার (বর্তমানে এক্স) হ্যান্ডলে শেয়ার করেন।

তবে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলায় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিরুদ্ধে হাইকোর্টে মানহানি মামলার আবেদন করেন মুঈনুদ্দীন। পরে তা দুই দফায় খারিজ হলেও সুপ্রিম কোর্টে ফের মামলায় আপিল করার আবেদন করলে গত ২০ জুন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট মুঈনুদ্দীনকে মামলা করার সুযোগ দিয়ে রায় দেন। এই রায়ের অনুলিপি যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এফএইচ/ইএ/জেআইএম