ফিচার

ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো টাকা লাগে না যে দেশে

প্রযুক্তির অন্যতম আশীর্বাদ বলা যায় ইন্টারনেট। আপনার ফোন বা কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে পুরো বিশ্বের খবরা খবর জানতে পারছেন ঘরে বসেই। তবে ইন্টারনেট আপনি ফোনের ডাটা ব্যবহার করুন কিংবা ব্রডব্যান্ড কানেকশন, টাকা খরচ করতেই হয়। মাসের বাজেটের বেশি কিছুটা অংশ ইন্টারনেটের পেছনে চলে যায়।

Advertisement

তবে বিশ্বের এমন একটি দেশ আছে, যেখানে সবাই বিনা মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। দেশটির সব বাসা বাড়ি, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, পেট্রোল পাম্প, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় ইন্টারনেট ফ্রি ব্যবহার করা যায়। ফলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, দেশটির নাগরিকদের মাসে অনেক খরচ বেঁচে যায়।

দেশটির নাম এস্তোনিয়া। ইউরোপের একটা ছোট্ট দেশ। রাজধানীর নাম তাল্লিন। এদেশে মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। যেখানকার বাসিন্দাদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেয় সে দেশের সরকার। শুধু তাই নয়, সব কিছুই সেখানে ডিজিটাল। সব কিছুই হয় ইন্টারনেটে।

আরও পড়ুন যে স্থানে মাসের অষ্টম দিন সবাইকে হাসতে হয় 

এস্তোনিয়া পৃথিবীর প্রথম ই-কান্ট্রি। ভোট দেওয়া থেকে শুরু করে সিগনেচার পর্যন্ত সবকিছুই ডিজিটাল সেবা। এমনকি দেশটির ই-রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়ে যেতে পারবেন বাংলাদেশে বসেই। এই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে।

Advertisement

২৪ বছর আগে ২০০০ সাল থেকেই এই দেশে রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা। এই দেশের সমস্ত স্কুল এবং কলেজে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহ ২০০০ সাল থেকেই রয়েছে। এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন।

এখানে অনলাইনে প্রতিটি সুবিধা পাওয়া যায়। ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অর্থ প্রদান সবই হয় ইন্টারনেটে। এস্তোনিয়ান নাগরিকরাও অনলাইনে অর্থ প্রদান করে। আমেরিকার একটি বেসরকারি সংস্থা ফ্রিডম হাউসের মতে, সারাবিশ্বে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এস্তোনিয়া একটি মডেল দেশ। বিনামূল্যে ইন্টারনেট ছাড়াও, আরও অনেক জিনিস রয়েছে যা এই দেশটিকে বিশেষ করে তোলে।

এস্তোনিয়ার অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ছিল দেশের প্রতিটি নাগরিক আগামী এক বছরের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শিখতে পারে। সারাদেশে ৩ হাজারের বেশি ফ্রি ওয়াই-ফাই স্পট রয়েছে। কফি শপ, পেট্রোল পাম্প, রেস্তোরাঁ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, হোটেল এবং সব সরকারি অফিসে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই রয়েছে। এখানে নির্বাচনে ভোটদানও হয় অনলাইনে। অর্থাৎ ঘরে বসেই নাগরিকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।

ইউরোপের উত্তর-পূর্বে বাল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই দেশটি একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে এই দেশ রাশিয়া থেকে পৃথক হয়। এরপর এখানকার অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি হয়। এস্তোনিয়ায় শুধু ইন্টারনেটই বিনামূল্যে নয়, এখানকার মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্টও পান বিনামূল্যে।

Advertisement

২০১৩ সালে দেশটির রাজধানী তালিনের তৎকালীন মেয়র এডগার সাভিসার প্রথম এই বিনামূল্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পরিষেবা চালু করেন। মুক্তমত কিংবা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও দেশটি পৃথিবী সেরা। যে কোনো ধরনের মতামত জানানোর সুযোগ রয়েছে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে জেলে দেবে না, এমনকি কাউ অযথা হয়রানিও করবে না।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হয়েছে ১৯৯১ সালে। স্বাধীনতার মাত্র ২৬ বছরের মাথায় সফলতার শীর্ষে পৌঁছে গেছে। বিশুদ্ধ বাতাসের কথা বললেও এস্তোনিয়ার নাম সবার উপরে চলে আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত বছর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এস্তোনিয়া এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে যেখানে বায়ুর গুণমান সবচেয়ে ভালো।

আরও পড়ুন বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ কোনটি জানেন?  বিয়ের ৩ মিনিট পরই ডিভোর্স! 

সূত্র: ওয়াই-ফাই গ্লোবাল, এস্তোনিয়া ওয়ার্ল্ড

কেএসকে/জিকেএস