অল্প খরচ ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় নওগাঁয় বেড়েছে আমের চাষ। জেলার সাপাহার আম বেচাকেনার প্রধান কেন্দ্র। সাপাহারে ছোট-বড় ৪০০-৫০০টি আমের আড়ত গড়ে উঠেছে। এসব আড়তে কর্মরত ৮-১০ হাজার শ্রমিক। এ পেশায় তাদের ভাগ্য বদলেছে।
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ২৪ হাজার ২০০ টন আম।
শনিবার (২৭ জুলাই) সাপাহার হাটে প্রতিমণ আম্রপালি আম বিক্রি হয়েছে ৪০০০-৬৫০০ টাকা। আর বারি-৪ ৩৮০০-৪৬০০ টাকা, ফজলি ৩২০০-৪০০০ টাকা এবং ব্যানানা ম্যাংগো বিক্রি হয়েছে ৫৫০০-৬৫০০ টাকা মণ। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিমণ আমে দাম বেড়েছে ১৫০০-২০০০ টাকা।
সরেজমিন সাপাহার আমের হাটে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আম নিয়ে আড়তে আসছেন ব্যাপারীরা। সেই আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য ক্যারেট তৈরির (ক্যারেটে আম সাজানো) কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।
Advertisement
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে আসা শ্রমিক আবু হায়াত বলেন, ‘গত ৪-৫ বছর ধরে আমের সময়ে ক্যারেট তৈরির কাজে সাপাহারে আসি। প্রতিবছর ভালোই টাকা আয় হয়। প্রতি ক্যারেট তৈরির জন্য ২০ টাকা করে পাই। আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ১৬০০-১৭০০ টাকা আয় হয়। মৌসুমে এক লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।’
আরও পড়ুন:
কৃষকের আমে ভাগ্য বদল ভ্যানচালকদের কুরিয়ারেই পচে নষ্ট হলো ৭২৫ মণ আম নওগাঁয় বেড়েছে আমের দামতিনি আরও বলেন, ‘অন্যসময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ৫০০-৬০০ টাকা পাই। কিন্তু আমের সময় আড়তে কাজ করে তার তুলনায় দ্বিগুণ টাকা বেশি পাচ্ছি। আগের তুলনায় অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে।’
রহিম ফল ভান্ডারে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত হান্নান মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমের উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় এবছর কাজের চাপ একটু কম। আমরা এখানে ২০ জন ক্যারেট তৈরির কাজ করি। প্রতিদিন ১১০০-১২০০ ক্যারেট তৈরি করি। প্রতি ক্যারেটের জন্য ২৪ টাকা করে দেয়। এতে দিনে ১৩০০-১৪০০ টাকা আয় হয়। তিন মাসে ভালোই টাকা আসে। একসঙ্গে অনেক টাকা পাওয়ায় সংসার চালাতে এখন আর আগের মতো কষ্ট হয় না।’
Advertisement
জেলার পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল গ্রামের শ্রমিক রুহুল আমীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় ধানচাষ আর মানুষের বাড়িতে কাজ করেই আমাদের জীবন চলতো। বছরে একবার ধান লাগানোর সময় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ৮০০০-১০০০০ হাজার টাকার বেশি ইনকাম হতো না। আর মানুষের বাড়িতে কাজ করলে দিনে ৫০০ টাকার বেশি পেতাম না। এখন আমের মৌসুমে আড়তে কাজ করি। প্রতি ক্যারেটের জন্য ২২ টাকা করে পাই। এতে প্রতিদিন ১৫০০-১৬০০ টাকা আয় হয়। সংসার চালানোর পাশাপাশি নিজেও কিছু জমি লিজ নিয়ে বাগান করেছি।’
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, বিগত পাঁচ বছরে আমকেন্দ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠায় কৃষক ও শ্রমিকসহ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হলে কৃষি বিভাগ ব্যবস্থা নেবে।
এসআর/এএসএম