পরিচালকদের সংগঠনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও কাজে ফিরতে পারলেন না পরিচালক রাহুল মুখার্জি। বাংলাদেশের চরকিতে কাজ করতে এসে বিপদে পড়েছেন তিনি। তিনি গোপনে নিয়ম না মেনে বিদেশে কাজ করেছেন এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপেছে পশ্চিমবঙ্গের ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন সংগঠন।
Advertisement
ঢাকার ওটিটি চরকির সঙ্গে গোপনে কাজ করে গেছেন কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। এ কারণে তার ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র ও টিভির পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (ডিএইআই)। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন সেখানকার অনেক চলচ্চিত্র পরিচালক। রাহুলের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে সংগঠন থেকে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছিলেন প্রায় ৭৫ জন সদস্য। সেই তালিকায় ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, অরিন্দম শীল, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তীরা। তাদের চাপে রাহুলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে সংগঠনটি।
গতকাল ২৬ জুলাই শুক্রবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ডিএইআই রাহুলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। সেই মর্মে আজ শনিবার তিনি এসেছিলেন নতুন সিনেমার শুটিং করতে। সেখানে এসে হাজির হন প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জিসহ অন্য তারকারা। কিন্তু শুটিং করা হলো না। কারণ রাহুলের সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ানরা। পরিচালকদের সংগঠন রাহুলের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার থেকে ছাড়পত্র মেলেনি। তারা আগের সিদ্ধান্তেই বহাল রয়েছে। তাই সেটে এসেও শুটিং শুরু করতে পারলেন না রাহুল। আর এ নিয়ে বেজায় ক্ষেপেছেন পরিচালকরা। তারাও রাহুলের পক্ষ নিয়ে কর্মবিরতির পথে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। প্রসেনজিৎ, দেবের মতো তারকারাও রয়েছেন রাহুলের পাশে।
কলকাতার বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, রাহুল শুটিং সেটে পৌঁছাতেই টেকনিশিয়ানরা শনিবার কাজ বন্ধ করে দেন। টেকনিশিয়ানসরা কাজে না যোগ দেওয়ায় দীর্ঘক্ষণ মেকআপ ভ্যানেই বসে থাকতে হল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। অপেক্ষায় থাকলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্যসহ অন্যান্যরাও। পরে টেকনিশিয়ানস স্টুডিওর সামনে বিক্ষোভ দেখান টলিউডের পরিচালকরা।
Advertisement
এদিন পরিচালকদের প্রশ্ন, রাহুলের উপস্থিতিতে কলাকুশলীরা কেন কাজ করলেন না। একইভাবে যদি পরিচালকরা কাজ বন্ধ করে দেন, তাহলে কি শুধু কলাকুশলীরা কাজ তুলে দিতে পারবেন? এনিয়ে তীব্র শোরগোল শুরু হয় টেকনিশিয়ানস স্টুডিয়োতে। এদিন শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রসেনজিৎ, দেব সকলেই ডিরেক্টরদের পাশে দাঁড়ান।
এ নিয়ে মুখ খুলেছেন পরিচালক, প্রযোজক রাজ চক্রবর্তী। তিনি সমস্ত পরিচালকদের হয়ে বলেন, ফেডারেশনকে নিজেদের সিদ্ধান্ত আরও একবার ভেবে দেখার অনুরোধ করেন। রাজ বলেন, ‘যদি তারা সিদ্ধান্ত না বদলান, তাহলে আমি পরিচালকদের অনুরোধ করব, যে আমরা পরিচালকরাও সোমবার থেকে ফ্লোরে যাব না। তারপর দেখব কাজ কীভাবে হয়।’ রাজ যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন উপস্থিত অন্যান্যদের সহমত পোষণ করতে দেখা যায়। পরিচালকদের পক্ষে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কেও।
পরিচালক রাহুল উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে কিনা, তা নিয়ে বেশকিছুদিন ধরেই বিতর্ক অব্যাহত। শুক্রবারই মিটিংয়ের পর ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া। সেখানে পরিচালক রাহুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল তা ঠিক নয় বলেই দাবি করা হয়েছিল ডিরেক্টরস গিল্ডের পক্ষ থেকে। কিন্তু তবুও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল ফেডারেশন।
ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, তারা আগের সিদ্ধান্তেই অনড়। এসভিএফ তাদের পূজার ছবিটি বানাতে পারবেন। সেখানে কোনো জটিলতা নেই। কিন্তু এর পরিচালক হিসেবে রাহুল থাকতে পারবেন না। তিনি কার্যনির্বাহী প্রযোজক হিসাবেই থাকবেন।
Advertisement
সংবাদমাধ্যমকে স্বরূপ বিশ্বাস আরও জানান, ‘শনিবার রাহুলের বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ নিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব। তখনই প্রকাশ্যে আসবে সব।’
এই ঘটনার জল কতদূর গড়ায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।
এলএ/এএসএম