তথ্যপ্রযুক্তি

কোটি গ্রাহকের ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ, যা বলছে বিটিআরসি

অনলাইনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তাহমিদ বোরহান। মাসের শুরুতে পুরো মাসের জন্য কেনেন মোবাইল ইন্টারনেটের ডাটা। জুলাই মাসেও রবি থেকে ৩৮ জিবি ডাটা কিনেছিলেন। দেশে গত ১৬ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেটে ধীরগতি শুরু হয়। এরপর ১৮ জুলাই রাতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে তার ২১ জিবি ডাটা অব্যবহৃত থেকে গেছে। ৩০ জুলাই এ ডাটার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

Advertisement

দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সচল হলে অব্যবহৃত এ ডাটা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন কি না, তা জানতে উদগ্রীব তাহমিদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত দুইদিনে রবির কল সেন্টারে যোগাযোগ করেও কিছু জানতে পারিনি। বিষয়টি জানতে চাইলে রবি থেকে শুধুই বলা হচ্ছে, ‘এ নিয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

শুধু তাহমিদ বোরহান নন, তার মতো কয়েক কোটি গ্রাহক একই সমস্যায় পড়েছেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক ১৩ কোটি। এসব গ্রাহকদের অধিকাংশেরই ডাটা প্যাকেজ কেনা ছিল। কারও বেশি, কারও কম। ফলে সবাই কম-বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে এ নিয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। ফলে চিন্তাগ্রস্ত গ্রাহকরা ক্ষোভ জানাচ্ছেন।

ডাটার মেয়াদ শেষে লোকসানে গ্রাহকরা

Advertisement

ফাহিম আলম আবির নামে রবির আরেকজন গ্রাহক বলেন, আমার ৭ দিন মেয়াদের ১২ জিবি ডাটা কেনা আছে। ২৭ তারিখে মেয়াদ শেষ। রবির কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করলাম, তারা জানালো, ‘এ নিয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

গ্রামীণফোনের গ্রাহক সাদিয়া ইসলাম মৌ। তিনি একজন ব্লগার। গত ২ জুলাই ৩০ দিন মেয়াদে ৭০ জিবি মোবাইল ইন্টারনেট ডাটা কেনেন, যার অধিকাংশই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। সাদিয়া ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ৭৪৯ টাকায় ডাটা কিনেছিলাম। মাত্র ১৬ জিবি ব্যবহার করেছি। বাকি সব ডাটা রয়ে গেছে। এটা এখন ব্যবহার করতে দেবে কি না, তা নিয়ে কিছু জানতে পারছি না।

মোবাইল ইন্টারনেট চালুর সঙ্গে সঙ্গে অব্যবহৃত ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, যে কারণেই হোক, গত এক সপ্তাহের বেশি মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে অব্যবহৃত ডাটা ইন্টারনেট চালুর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করতে দিতে হবে। পরবর্তী ডাটা প্যাকেজ কিনলে যুক্ত হবে অথবা এক-দুদিন সময় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে গ্রাহকরা ক্ষতির মুখে পড়বে।

নীরব শাহরিয়ার শাকিল নামে একজন গ্রাহক ফেসবুকে লিখেছেন, আমি ফ্রিল্যান্সিং করি। ব্রডব্যান্ড লাইন আছে বাসায়। তারপরও মাসে ২০০ জিবি ডাটা কেনা হয়। জুলাই মাসেও ১৯০ জিবি কিনেছিলাম। এখনো ১৩৫ জিবি নেট পড়ে আছে। ২৯ জুলাই মেয়াদ শেষ হবে। এখন আমার এ ক্ষতি কে পূরণ করে দেবে?

Advertisement

রিমন খান নামে আরেকজন লিখেছেন, আমি শিক্ষার্থী। পড়াশোনার কাজে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইন্টারনেট কেনা হয়। যেদিন ১৫ জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনেছি সেদিনই নেট অফ। ৭ দিন মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আজকে (২৬ জুলাই)। এটা কি আমাকে আর ফেরত দেওয়া হবে না? বিটিআরসি কী করছে, তারা কিছু বলছে না কেন?

বিটিআরসির দিকে তাকিয়ে অপারেটরগুলো

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে। বিশেষ একটা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেটে শাটডাউনটা হয়েছে। তার মধ্যেও সার্ভিস দেওয়ার জন্য আমাদের যতটুকু সাধ্য সব করেছি। এখন আমরা যেটা ভাবছি, তা হলো গ্রাহকের যে ক্ষতিটা হয়েছে, তা কতটা; কীভাবে পূরণ করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের গার্ডিয়ান (অভিভাবক) টেলিকম রেগুলেটরের (বিটিআরসি) সঙ্গে কথা চলছে। এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা এলে, তখন আমরা হয়তো স্পষ্ট করে গ্রাহককে এ নিয়ে জানাতে পারবো। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

কবে নাগাদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে এবং গ্রাহকরা জানতে পারবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সাহেদ আলম বলেন, সেটা নেটওয়ার্ক (মোবাইল ইন্টারনেট) না খোলা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। আগে ইন্টারনেট চালু হোক, তারপর জানানো হবে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটারনাল কমিউনিকেশন্স অঙ্কিত সুরেকা জাগো নিউজকে বলেন, অব্যবহৃত ডাটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন গাজী তৌহিদ আহমেদও এ নিয়ে ‘সিদ্ধান্ত না হওয়ার’ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত

অব্যবহৃত ডাটা নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের স্বার্থের বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। অপারেটরগুলোকে একসঙ্গে ডেকে বৈঠকও করা হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

অ্যাপসভিত্তিক ডিজিটাল সার্ভিসে স্থবিরতা রবি-সোমবারের মধ্যে চালু হবে মোবাইল ইন্টারনেট: পলক

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জাগো নিউজকে বলেন, বিটিআরসি সব সময় গ্রাহকদের স্বার্থে কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রেও (অব্যবহৃত ডাটা) আমরা গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। মোবাইল অপারেটরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ নিয়ে খুব শিগগির নির্দেশনা দেওয়া হবে।

মোবাইল ইন্টারনেট সচল হবে কবে?

গত ১৬ জুলাই থেকে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটে ধীরগতি ছিল। ১৮ জুলাই সন্ধ্যার দিকে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ। বিটিআরসি সূত্র এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, রবি অথবা সোমবার (২৮ বা ২৯ জুলাই) মোবাইল ইন্টারনেট চালু হতে পারে।

অন্যদিকে মোবাইল অপারেটরগুলো বলছে, তাদের অবকাঠামোতে কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। সেক্ষেত্রে বিটিআরসির নির্দেশনা পেলেই তারা গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দিতে প্রস্তুত।

এএএইচ/এমএইচআর/এমএস