তাইওয়ান এবং ফিলিপাইনে তাণ্ডব চালানোর পর এবার চীনের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানলো টাইফুন গেমি। তাইওয়ান এবং ফিলিপাইনে টাইফুনের প্রভাবে ভয়াবহ বন্যা এবং ভূমিধস আঘাত হানায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে। খবর বিবিসির।
Advertisement
এদিকে চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশ থেকে দেড় শতাধিক মানুষকে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাইফুনটি উপকূলে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই চীন সর্বোচ্চ স্তরের দুর্যোগ সতর্কতা সক্রিয় করেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্যোগ ত্রাণ পরিকল্পনা বিষয়ক কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ফুজিয়ান প্রদেশে সব ধরনের ট্রেন সেবা বাতিল করা হয়েছে। চীনের উত্তরাঞ্চলের কর্তৃপক্ষ সেখানে ভারী বৃষ্টি, ভূমিধস এবং বন্যার সতর্কতা জারি করেছে। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ত্রাণ বিষয়ক সদর দপ্তর প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।
Advertisement
অপরদিকে ফিলিপাইনে টাইফুনের সময় প্রায় ১৫ লাখ লিটারের বেশি জ্বালানিসহ একটি ট্যাঙ্কার ডুবে গেছে। ফলে বিপুল পরিমাণ তেল সাগরের পানিতে মিশে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার দুটি ট্যাঙ্কার ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অপর ট্যাঙ্কারটি তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে ডুবে গেছে। এমটি টেরা নোভা নামের একটি ট্যাংকার ইলোইলো শহরে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ম্যানিলা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ডুবে যায় সেটি। এতে কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়েছে।
ফিলিপিনো কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল আরমান্দো বালিলো এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আমরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছি। তেল ছড়িয়ে পড়া আটকাতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
তিনি জানিয়েছেন, যদি ট্যাংকারে থাকা সব তেল ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি হবে ফিলিপাইনের ইতিহাসে তেল ছড়িয়ে পড়ার বৃহত্তম ঘটনা। বালিলো বলেন, এই দুর্ঘটনায় ম্যানিলা শহর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিরাট ঝুঁকি রয়েছে।
Advertisement
পরিবহন সচিব জেইমি বাতিস্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্যাংকারের ১৭ ক্রুর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ক্রুর সন্ধানে অভিযান চলছে। তবে শক্তিশালী বাতাস ও বড় বড় ঢেউয়ের কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন শহরের কাছে আঘাত হানে টাইফুন গেমি। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৪০ কিলোমিটার। ধারণা করা হচ্ছে, গত ৮ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন।
শক্তিশালী এই টাইফুন আঘাত হানায় তাইওয়ানের অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট, দুই শতাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং দেশটির সবচেয়ে বড় বার্ষিক সামরিক মহড়ার কিছু অংশ বাতিল করা হয়। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাতে তাইওয়ানের ইলান কাউন্টির নিকটবর্তী উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে টাইফুন গেমি।
বুধবার সেখানে টাইফুন ডে হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এদিন দূর্যোগের কারণে সব ধরনের কাজকর্ম বাতিল করা হয়েছে এবং স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে মঙ্গলবারও সব স্কুল এবং অফিস বন্ধ রাখা হয়। একই সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইটও বাতিল করা হয়। ওই অঞ্চলে টাইফুনের প্রভাবে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।
টিটিএন