দুই যুগ আগেও আর দশটা মানুষের মতোই স্বাভাবিক ছিলেন শরীয়তপুরের কামাল শেখ। বিয়ে করে পেতেছিলেন সোনার সংসার। তবে বিয়ে করা সেই স্ত্রী তাকে ফেলে চলে যান অন্যত্র। আর স্ত্রীকে হারিয়ে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন কামাল শেখ।
Advertisement
শরীয়তপুরের দক্ষিণ ডিঙ্গামানিক এলাকার আলী শেখের ছেলে কামাল শেখ। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি মেজো। ২৫ বছর আগে স্ত্রী নূরনাহারকে ভালোবেসে পেতেছিলেন সোনার সংসার। লাইলী-মজনুর প্রেম কাহিনির চেয়ে কম যায় না কামালের ভালোবাসার গল্প। পেশায় রিকশাচালক হলেও স্ত্রীকে ভালোবেসে ঘুরাতেন বিভিন্ন জায়গায়। হঠাৎ স্ত্রী তাকে ফেলে অন্যত্র বিয়ে করলে মানসিক বিপর্যয় মেনে আসে তার জীবনে। একপর্যায়ে স্ত্রীর শোকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন কামাল।
কামাল শেখের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘২০ বছর আগে আমার ছেলে ভালো ছিল। বিয়ার পর বউ চলে যাওয়ায় পাগল হয়ে গেছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি নাই। এখন বাহিরে একটা টিনের একচালা ভাঙা ঘরে শিকলে বন্দি করে রাখছি। মা হিসেবে ছেলের এমন কষ্ট আর সহ্য হয় না। আমরা সকলের সাহায্য চাই।’
কামালের বোন শারমিন আক্তার বলেন, ‘ভাইয়ের বেশ সাজানো গোছানো সংসার ছিল। ভাবিকে অনেক ভালোবাসতেন। রিকশায় ঘুরতে নিয়ে যেতেন। এরপর ভাবি একদিন চলে যায়, এরপর ভাই ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যান। প্রথমে ঢাকায় ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, তবে টাকার সমস্যার কারণে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এখন সরকার যদি সাহায্য করতো, ভাই হয়তো আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠতেন।’
Advertisement
প্রতিবেশী রহমান বলেন, কামাল ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি যে এই অবস্থায় আসবেন কখনো ভাবিনি। ভাবিকে অনেক ভালোবাসতেন। বর্তমানে তার চিকিৎসা খুবই জরুরি। তাকে যদি সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো যেতো, মনে হয় তিনি সুস্থ হয়ে উঠতেন।
কামালের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সরকারিভাবে সাহায্য করার কথা জানিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ বৈদ্য নাদিম।
তিনি বলেন, আমরা কামালের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে লোক পাঠাবো। প্রথমত তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও তার জন্য একটি ঘর ও চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
এফএ/জেআইএম
Advertisement