অর্থনীতি

ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতায় দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয় কারফিউ। তিনদিন ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। পরে বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে দিনের বেলা ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়, শুরু হয় অফিস-আদালতের কার্যক্রম। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যক্রম শুরু করে। খুলতে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতানগুলো।

Advertisement

তবে এখনো পরিবর্তন আসেনি রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়। ফুটপাতগুলোতে বিক্রি নেই বললেই চলে। সহিংসতায় সৃষ্ট অচলাবস্থায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) পল্টন, গুলিস্তান, নিউমার্কেটসহ কয়েকটি এলাকা ঘরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান, কারফিউ কিছু সময় শিথিল থাকলেও ক্রেতা আসছে না। এ সময়টাতে কর্মব্যস্ত মানুষ ছুটছেন অফিস-কর্মক্ষেত্রে। এছাড়া মানুষের হাতে বাড়তি পণ্য কেনার মতো টাকাও নেই। যে কারণে বিক্রি তলানিতে নেমেছে।

Advertisement

এদিন ওইসব এলাকার বেশকিছু ফুটপাতের অনেক দোকান বন্ধ দেখা যায়। কথা হয় বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনের ফুটপাতের বিক্রেতা ফরিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে মানুষজনের কোনো ইনকাম নেই। নগদ টাকা ছিল না। এখন খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে ব্যস্ত। পোশাক-পরিচ্ছদ কিনবে কীভাবে?’

এনামুল নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘এ এলাকায় ফুটপাত জমে মানুষের অফিস যাওয়া-আসার সময়। এখন যতক্ষণ কারফিউ শিথিল থাকে, সেসময় কীভাবে যাতায়াত করবে সেই চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। কেনাকাটা করবে কখন?’

তিনি বলেন, ‘এ কারণে অনেকে দোকান খুলছে না। মার্কেটেও এখনো অনেক দোকান বন্ধ। মার্কেটে ক্রেতা নেই। মূলত যারা মার্কেটে আসেন, তাদের বড় একটি অংশ ফুটপাতেরও ক্রেতা।’

আরও পড়ুন

Advertisement

ব্যবসা-বাণিজ্যে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ রাইড শেয়ারিংয়ে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা কাজ করেনি মোবাইল অ্যাপ, দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

পল্টন মোড়ে ফুটপাতে মোবাইলের বিভিন্ন একসেসরিজ (পণ্যসামগ্রী) বিক্রি করেন সুমন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকায় বাইরের (গ্রাম-গঞ্জের) কোনো মানুষ নেই। তারাই আমাদের মূল ক্রেতা। যে কারণে বিক্রি শূন্যের কোটায়।’

তিনি বলেন, ‘আগে সারাদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি ছিল, এখন দুপুর পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৩টা) মাত্র ৩০০ টাকা বিক্রি করেছি। এতে ৫০-৬০ টাকা লাভ থাকবে। সকালের নাস্তায় এর চেয়ে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। দুপুরে খাওয়া এখনো বাকি। তাহলে সংসারে নেবো কী?’

সুমন বলেন, ‘এসব আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের মরণ হয়েছে। না পারছি খেতে, না পারছি গ্রামে ফিরে যেতে।’

গুলিস্থানের ফুটপাতের এক ফল বিক্রেতা বলেন, ‘প্রায় ১০ দিন বাদে গতকাল (বুধবার) দোকান খুলেছি। মানুষজন চলাচল করছে, কিন্তু কেউ যেন তাকিয়ে দেখছে না, বিক্রি হবে কি? আমরা এখন খাবো কী তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। যা বিক্রি হচ্ছে, সেটা দিয়ে নিজের খরচই হচ্ছে না।’

এসব ব্যবসায়ীর মতো নিউমার্কেটের ফুটপাতের কয়েকজন অস্থায়ী দোকানিও প্রায় একই কথা জানান।

তারা জানান, ফুটপাতে বা মার্কেটে এখনো বেচাবিক্রি জমেনি। কারফিউ শিথিলের সময় উভয় জায়গাতেই ক্রেতার আনাগোনা ছিল একদম কম। ফুটপাত থেকে মূলত নিম্ন আয়ের মানুষেরা কেনাকাটা করেন। তাদের খাবারবহির্ভূত বাড়তি পণ্য কেনার অবস্থা এখন নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।

এনএইচ/ইএ/এএসএম