অর্থনীতি

আতঙ্ক কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে আতঙ্কে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। এতে মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়। তবে বৃহস্পতিবার আতঙ্ক কেটে শেয়ারবাজারে ফের ফিরেছে ক্রেতা। ফলে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে গতকালের মতো আজ বৃহস্পতিবারও (২৫ জুলাই) কাজ করেনি মোবাইল অ্যাপ। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারেননি। একই সঙ্গে ইন্টারনেটেও ধীরগতি। অবশ্য সবগুলো ব্রোকারেজ হাউস নির্ধারিত সময়ে লগইন করে লেনদেনে অংশ নিতে পেরেছেন এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে লেনদেনে সমস্যা হয়নি।

Advertisement

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বুধবার ব্রডব্যান্ড নেট আসলেও কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল। ফলে গতকালের পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায় না। ইন্টারনেটের গতি কম থাকলেও আজ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তাতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সে আতঙ্ক কেটে গেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে রাজধানীজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। গত বুধবার রাতে হাফিন ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাতভর যাত্রাবাড়ী অঞ্চলে চলে সংঘর্ষ। বৃহষ্পতিবারও টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে চালানো হয় তাণ্ডব। আগুণ দেওয়া হয় একাধিক পুলিশ বক্সে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, মেট্রোরেলের স্টেশনে চালানো হয়েছে তাণ্ডব। রক্ষা পায়নি ফায়ার সার্ভিসও। মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে ফায়ার ফায়টারদের। তাণ্ডবের শিকার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম। বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মতো সরকারি স্থাপনায়ও তাণ্ডব চালানো হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক বক্স। হামলা হয়েছে থানাতেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। একই সঙ্গে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এতে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে খুব একটা বের হননি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার পর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শিথিল করা হয়েছে কারফিউ। রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। সীমিত পরিসরে চলছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। ব্যাংক খোলায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু করা হয়। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো নয়, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

Advertisement

বুধবার নির্ধারিত সময় বেলা ১১টায় শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে কিছু কিছু জায়গায় ইন্টারনেটে সমস্যা হওয়ায় লেনদেনে তার প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে অকেজো হয়ে পড়ে মোবাইল অ্যাপ। পাশাপাশি কয়েকদিন ধরে চলা তাণ্ডবের আতঙ্কও ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে ডিএসইতে লেনদেন কমে দুইশ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। একই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় স্থান পায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে সূচকের বড় পতন হয়।

তবে আজ বৃহস্পতিবার সে আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। মোবাইল অ্যাপ কাজ না করলেও বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়েছেন। এতে বেড়েছে ক্রেতা। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। মূল্যসূচকেরও বড় উত্থান হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৪ পয়েন্ট কমে যায়। ফলে আবারও পতনের আতঙ্ক পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের। অবশ্য সে আতঙ্ক কাটতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বাজারে ক্রেতার চাপ বাড়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের সময় গাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হয়।

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৮৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৬ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৩২ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

Advertisement

সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৩৩৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল লেনদেন হলেও ইন্টারনেটের সমস্যা ছিল। গতকালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। তাছাড়া কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার একটা প্রভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পড়ে। যে কারণে বড় দরপতন ও লেনদেন কম হয়। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আতঙ্ক, উদ্বেগ অনেকটাই কেটে গেছে। এতে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, গতকালের মতো আজও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারেননি। আবার ইন্টারনেটের গতিও কিছুটা কম ছিল। তবে আজ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ভালো ছিল। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে।

ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অগ্নি সিস্টেম, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, এনআরবি ব্যাংক, রংপুর ফাউন্ড্রি, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার এবং ফারইস্ট নিটিং।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৯টির। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৯টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এমএএস/কেএসআর/এএসএম