শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাকরি ছাড়লেন জাবি শিক্ষক

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতির আবেদন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক জাহিদুল করিম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসানের বরাবর পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় তিনি অব্যাহতির আবেদন করেন।

চাকরি থেকে অব্যাহতি চাওয়া জাহিদুল করিম বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ই-মেইলে বার্তা পাঠানো হয়। ফিরতি ই-মেইলে তিনি জাগো নিউজকে অব্যাহতির আবেদন করার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

Advertisement

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসানও জাগো নিউজকে এ অব্যাহতির আবেদনপত্র পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালের দিকে আমরা একটি ই-মেইল পেয়েছি। সেটি সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিমের। তিনি যেহেতু দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, সেজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।’

রেজিস্ট্রার আবু হাসান আরও বলেন, ‘তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি চেয়েছেন। তার আবেদনটি সঠিক বলে বিবেচিত হলে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এটি আলোচ্যসূচিতে রাখা হবে। সেখানে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’

অব্যাহতিপত্রে যা লিখেছেন জাহিদুল করিম

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে পাঠানো অব্যাহতিপত্রটি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, আমি বিগত প্রায় ১৪ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছি। দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা এবং শিক্ষকদের দলীয় মনোভাব আমাকে অনেক ব্যথিত করেছে।

Advertisement

‘আমি সবসময় সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছি এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সর্বদা পাশে থেকেছি। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর মূল্যবান জীবন দিতে হয়েছে।’

‘সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারতো। তাহলে এত প্রাণ হানির ঘটনা ঘটতো না। যে সকল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তাদেরকে নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা। তাদের সাথে সাথে সমগ্র জাতি আজ শোকাহত। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা এই জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।’

জাহিদুল করিম আরও লিখেছেন, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং কিছু সংখ্যক প্রতিবাদী শিক্ষকদের রক্তাক্ত করার মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড দেখেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের আমি নির্লিপ্ত থাকতে দেখেছি। শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।

‘আন্দোলনে শহীদ সকল শিক্ষার্থী এবং আহত সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা প্রকাশ করে তিনি লিখেন, রাজনৈতিক দলীয়করণের কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধ কে জাগ্রত করতে আমি সহযোগী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি হতে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি ঘোষণা করছি।’

এএএইচ/এসএনআর/জিকেএস