মোবাইল ইন্টারনেট না থাকায় ই-কমার্স, এফ-কমার্স (ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসার একটি মডেল যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট তৈরি না করেই সরাসরি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের সাহায্য ব্যবসা পরিচালিত হয়), রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি তথা অ্যাপসভিত্তিক সেবাসমূহে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট না থাকায় বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের।
Advertisement
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা গত ১৭ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৮ জুলাই থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। গত ২৩ জুলাই থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে এখনও ফেরেনি মোবাইল ইন্টারনেট।
আবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ এসব স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া অনলাইনে লেনদেনসহ নিত্যদিনের বিভিন্ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
Advertisement
২৪ জুলাই এক অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটও চালু করার ব্যাপারে আশাবাদী।
ইন্টারনেট-সেবা সম্পর্কিত সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশের বাসাবাড়িতে আজকে রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড চালু হবে, যা আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত আমরা পর্যবেক্ষণ করবো। রোববার বা সোমবার সারাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট আসতে পারে। আমরা দৈনিক ৭০-৮০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি।
তিনি বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউব কোনোভাবেই বাংলাদেশের আইন মানছে না। এমনকি তারা তাদের নিজেদের পলিসিও মানছে না। ফেসবুক আমেরিকার কোম্পানি। তারা সেই দেশের সরকারের আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, কিন্তু আমাদের দেশের পলিসি মানে না। আমাদের সাইবার স্পেস ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করতে হলে দেশের আইন মেনে ফেসবুককে সোশ্যাল মিডিয়া চালাতে হবে। তারা (ফেসবুক) নিজেদের ব্যবসার কথা চিন্তা করে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কথা চিন্তা করে না। সহিংসতার বিষয়ে ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবকে চিঠি দেওয়া হবে। তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় দেশে ইকমার্স ও এফ কমার্স ব্যবসায় নেমে এসেছে স্থবিরতা। ই-কমার্স খাতে প্রতিদিন প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
ডেন্টাল পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান অর্কিড ডেন্টালের স্বত্ত্বাধিকারী সোহাগ জামান বলেন, আমাদের পণ্যগুলোর বিপনন ও বিক্রয় এফ কমার্সের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট সেবা না থাকায় এ খাতের উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্রেতারা ফোন দিয়ে পণ্য নিতে চাইছেন। পণ্য থাকলেও, দেওয়ার কোনো উপায় নেই। কেননা অনলাইন ডেলিভারি এক প্রকার বন্ধ। আবার এমএফএসে টাকা লেনদেনেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফুডপান্ডাসহ অন্যান্য খাবার ডেলিভারি অ্যাপস অর্ডার আসছে কম।
এছাড়া অনলাইনে পণ্য ও খাবার ডেলিভারিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
অনলাইন ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ রাহুল জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলনের এই কয়দিন আমাদের পরিসেবা বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট যতদিন বন্ধ ছিল ই-কমার্স ও এফ কমার্সের কার্যক্রম। আমার কাছে মনে হচ্ছে ই-কমার্সে গতি বা মোমেন্টাম আসতে আরও ১৫-২০ দিন লাগবে।
তিনি বলেন, এফ-কমার্স ডাউন কেননা ফেসবুক তো পুরোপুরি নেই। ই-কমার্সের পাশাপাশি এফ-কমার্সেও স্থবিরতা আছে। বেশিরভাগ অর্ডার আসে ফেসবুক থেকে।
গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের সংগঠন বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে আমাদের আইসিটি খাতের সবার ক্ষতি। আমাদের বেসিস সদস্যদের যে ব্যবসা, তার প্রায় পুরোটাই ইন্টারনেট নির্ভর। রপ্তানিমুখী তথ্যপ্রযুক্তি সেবা বিরাট ধাক্কা খেয়েছে।
এসএম/এসএনআর/জিকেএস