নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরের প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের পাশে বসে আমের হাট। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সরকারের দেওয়া কারফিউয়ের প্রভাবে ভাটা পড়েছে এই আমের হাটে। বুধবার (২৪ জুলাই) সাপাহার আমের হাটে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বাজারে আমদানি কম থাকায় বেড়েছে আমের দাম।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিমণ আম্রপালি আমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা, বারি-৪ বেড়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ফজলি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।
বুধবার (২৪ জুলাই) সাপাহার আমের হাটে প্রতিমণ আম্রপালি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিমণ বারি-৪ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকা। প্রতিমণ ফজলি আম বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। ব্যানানা ম্যাঙ্গো বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। সেখান থেকে ৪ লাখ ২৪ হাজার ২০০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
Advertisement
সাপাহার সদর ইউনিয়নের বাহাপুর গ্রামের আমচাষি রাকিব হাসান বলেন, বাজরে ১০ মণ আম এনেছি, প্রতিমণ আম ৪ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গত তিন থেকে চারদিনের তুলনায় বাজারে আজ আমের দাম ভালো। নিজস্ব ১০ বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছি। এ বছর সব মিলিয়ে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার আম বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় গতবছরের তুলনায় কিটনাশক খরচ কম হয়েছে। আমের দামও গতবছরের থেকে ভালো, যার কারণে লাভবান হতে পারবো।
পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের বনগ্রামের আমচাষি কাওছার আলী বলেন, বজারে ৮ মণ আম্রপালি আম এনেছিলাম। প্রতিমণ আম ৫ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। মাঝে কিছুটা দাম কম থাকলেও এখন দাম ভালো। বাজরে আম নিয়ে বিক্রির জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয় না।
কাওছার আলী আরও বলেন, ১ বিঘা জমিতে আমচাষে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। এবছর গাছে তুলনামূলক আম কম থাকলেও সাইজ বড় হওয়ার কারণে ফলন ভালোই হচ্ছে। বিঘা প্রতি ৮৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আম বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
দাম বৃদ্ধির ব্যাপরে জানতে চাইলে মাদারীপুরের মৌসুমী ব্যবসায়ী মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় তিন থেকে চার বছর ধরে সাপাহার বাজারে ব্যবসা করে আসছি। এ বছর শুরু থেকে আমের দাম বেশি। কারফিউয়ের প্রভাবে এবং আমের শেষ সময় আসায় গত তিন থেকে চার দিনে দাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার যে আম কিনেছি ৩৭০০-৩৮০০ টাকা আজ (২৪ জুলাই) সেই আম কিনতে হচ্ছে ৪৮০০-৫০০০ হাজার টাকা। বাজারে আমের আমদানি কম এবং ব্যাপারী বেশি হওয়ার কারণে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, কারফিউ শুরুর দিনই জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। আম বিক্রয় কিংবা পরিবহনে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সকল প্রকার কৃষি পণ্যকে কারফিউয়ের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারে যেন কোনো সমস্যা না হয় সে লক্ষ্যে জেলা কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তা এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছেন। আম বিক্রয় এবং পরিবহনে জেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এফএ/জেআইএম