তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বাজেট ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। এই বাজেটে বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের জন্য বিপুল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্য কোনো রাজ্যকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বললেই চলে। ফলে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে বিরোধীদের বৈঠকে ঠিক হয়, তারা এর প্রতিবাদ জানাবেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক কাঠামোয় সব রাজ্যকে গুরুত্ব দিতে হয়, সমানভাবে সাহায্য করতে হয়। বিরোধীদের দাবি, ঘোষিত বাজেটে তা না করে শুধু দুই শরিক দলের নেতৃত্বাধীন রাজ্যের জন্য ঢালাও প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে বুধবার লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীরা সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীদের পাশে দাঁড়িয়ে অন্য রাজ্যগুলোকে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন অখিলেশ যাদব, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিরোধী দলের নেতা ও সংসদ সদস্যরা।
পরে তারা লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন। রাজ্য়সভায় বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, দুটি রাজ্যকে ঢালাওভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বাকিদের কিছুই দেওয়া হয়নি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
Advertisement
অর্থমন্ত্রীর জবাব
এদিকে, বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যদিও সেসময় বিরোধী সংসদ সদস্যরা ওয়াক আউট করেন।
নির্মলা বলেন, ভারতে বাজেট বক্তৃতায় সব রাজ্য়ের নাম কখনই বলা হয় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, অন্যদের বঞ্চনা করা হয়েছে। দিন কয়েক আগেই মহারাষ্ট্রের জন্য বিশাল অংকের একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। বাজেটে তা উল্লেখ করা হয়নি। তার মানে কি মহারাষ্ট্রকে বঞ্চনা করা হয়েছে?
একপর্যায়ে তৃণমূল সংসদ সদস্যরা সভায় ফিরে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য করে নির্মলা বলেন, তৃণমূলের প্রতিবাদ করার কোনো অধিকারই নেই। তারা তো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলো পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়নই করে না।
Advertisement
সাফাই দিতে হচ্ছে বিজেপিকেও
বেশ কয়েকটি রাজ্যে অদূর ভবিষ্যতে বিধানসভা নির্বাচন হবে। তারমধ্যে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানা ও বিরোধী-শাসিত ঝাড়খণ্ডও রয়েছে। তাই বাজেট নিয়ে সাফাই গাইতে হয়েছে বিজেপিকেও।
হরিয়ানার বিজেপি মুখপাত্র সঞ্জয় শর্মা বলেছেন, হরিয়ানা হলো কৃষকদের রাজ্য। কৃষিক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী যে সুবিধা দিচ্ছেন, তা এখানকার কৃষকরা পাবেন। আয়কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন চাকরিজীবীরা। তাছাড়া হরিয়ানা একটি আত্মসমৃদ্ধ রাজ্য। আমাদের নিজের বাজেটই সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার। ফলে তারা রাজ্যের মানুষকে সাহায্য করতে পারবেন।
ঝাড়খণ্ডের বিজেপি মুখপাত্র প্রতুল শাহদেও বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার জনজাতির জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এর ফলে ঝাড়খণ্ড উপকৃত হবে। বাজেটে আমাদের রাজ্যের নাম উল্লেখ না থাকলেও, সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের সিদ্ধান্ত
বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপি নেতাদের যুক্তি মানতে নারাজ। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, হিমাচলের সুখবিুন্দর সিং সুখু, তামিলনাড়ুর স্ট্যালিন বলেছেন, বাজেটে তাদের রাজ্যকে বঞ্চনা করা হয়েছে ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে তারা নীতি আয়োগের ডাকা বৈঠক বয়কট করবেন।
বঞ্চনা নাকি অর্থাভাব?
কেন্দ্রীয় বাজেটের ক্ষেত্রে বঞ্চনার অভিযোগ নতুন নয়। একসময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, অন্ধ্রের এনটি রাম রাও, কর্ণাটকের রামকৃষ্ণ হেগড়েরা নিয়মিত এই অভিযোগ জানাতেন। পরবর্তী সময়েও এই অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে।
মোদী সরকারের আমলেও ব্যাপক বঞ্চনার অভিযোগ উঠছে। তাহলে কি ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রাখলে রাজ্যের প্রাপ্তির খাতা পূর্ণ হয় না? সুসম্পর্ক রেখে কেন্দ্রের সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বরে ছিলেন উড়িষ্যার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এটা ঠিক যে সুসম্পর্ক থাকলে বঞ্চনার অভিযোগ কম ওঠে। কিন্তু এবারের চিত্রটা একটু আলাদা। এবার তো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোকেও সেভাবে কিছু দেওয়া হয়নি। আর অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অর্থবরাদ্দের বিষয়টিও দেখতে হবে। অন্ধ্রের ক্ষেত্রে তো বাইরের থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
শুভাশিস বলেন, বাজেট দেখে মনে হচ্ছে, বর্তমান আর্থিক অবস্থায় সরকারের পক্ষে অন্য রাজ্যগুলোকে খুব বেশি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব ছিল না।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
এসএএইচ