জাতীয়

কোটা আন্দোলনে উগ্র-জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগসাজশ থাকতে পারে: সিটিটিসি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে উগ্রপন্থি বা জঙ্গি সংগঠনের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

Advertisement

তিনি বলেন, নরসিংদী কারাগারে হামলার ঘটনা ও জঙ্গি ছিনতাই হয়েছে বা ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর এই আন্দোলনের যারা নাশকতা চালিয়েছে ও উসকানি দিয়েছে, আমরা এরকম ২/১টি গ্রুপ শনাক্ত করেছি। একজনকে আমরা গতকাল শনাক্ত করেছি যিনি এর আগে সিটিটিসির হাতে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এই আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সহিংস কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। অচিরেই তাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারবো। কোটা আন্দোলনে উগ্রপন্থি বা জঙ্গিদের যোগসাজশ বা অংশগ্রহণ থাকলেও থাকতে পারে।

বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেই গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নরসিংদীর জেলা কারাগারে নজিরবিহীন হামলার সময় অস্ত্রাগার ভেঙে অস্ত্র ও গুলি লুট করা হয়। জেল সুপার, জেলারসহ ঊর্ধ্বতন কারা সদস্যদের জিম্মি করা হয়। তাদের মারধরও করা হয়। তাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের কারা মসজিদে নিয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রাখে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র ছিল। পরে কারা কর্মকর্তাদের বাসা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কারা অভ্যন্তরের আরও কিছু স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর কারা ফটক ভেঙে ৮১টি সরকারি অস্ত্র লুট করে হামলাকারীরা।

Advertisement

এ সময় ৮ হাজার ৫০ রাউন্ড গুলি লুট করে হামলাকারীরা। আন্দোলনের নামে কয়েকশ সশস্ত্র জনতা প্রথমে কারা ফটকে হামলা চালায়। এরপর তারা কারারক্ষীর ওপর হামলা করে অস্ত্র কেড়ে নেয়। কারা অভ্যন্তরে ঢুকে বন্দিদের মুক্ত করে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে কারাগারে থাকার ৮২৬ বন্দির সবাই পালিয়ে যান। এর মধ্যে ৯ জঙ্গিও রয়েছে।

সেখান থেকে পালানো ৯ জঙ্গির মধ্যে শীর্ষ দুই নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি।

নরসিংদী জেল থেকে পলাতক ‘অপারেশন গর্ডিয়ান নট’র সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ দুই জঙ্গি হলেন- ইশরাত জাহান মৌসুমী মৌ (৩০) ও খাদিজা পারভীন মেঘলা ওরফে মেঘনা (৩১)।

বুধবার (২৪ জুলাই) ভোরে সিটিটিসির চিরুনি অভিযানে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সিটিটিসি ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর রাত ৯টা থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪০ ঘণ্টা নরসিংদী মাধকণী শেখেরচড়ের ভগিরথপুর এলাকা এবং গাংপাড় এলাকার দুটি বাড়িতে ‘অপারেশন গর্ডিয়ান নট’ অভিযান চালায়। অভিযানে দুজন নিহত হন, তারা হলেন- নব্য জেএমবির আব্দুল্লাহ আল বাঙ্গালি (৩০) ও তার স্ত্রী আকলিমা আক্তার মনি (২৮); অপর দুই নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- নরসিংদী কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ওই দুজন নারী জঙ্গি।

Advertisement

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ইশরাত জাহান মৌসুমী মৌ ও খাদিজা পারভীন মেঘলা ওরফে মেঘনা দুজনেই বেসরকারি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই দুই জঙ্গিই নরসিংদী জেলে সাজা ভোগ করছিলেন। কারাগারে হামলার সুযোগে দুজনই জেল থেকে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে সিটিটিসি তাদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে। কারণ পালানো কয়েদিদের মধ্যে ৯ জন জঙ্গি ছিল। তাদের মধ্যে দুই জঙ্গি ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, কারণ তারা আত্মঘাতী হামলার প্রস্তুতি জানা ছিল। আন্দোলনের নামে জামায়াত-বিএনপি তাদেরও জেল থেকে পালাতে বা ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।

তিনি বলেন, আরও যে সাত জঙ্গি পলাতক তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই তাদের আমরা গ্রেফতার করতে পারবো।

আন্দোলনের নামে কারাগারে হামলা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের লক্ষ্য বা পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারাগারে হামলাকারীরা সব কয়েদিকে মুক্ত ও সব গোলাবারুদ লুট করেছে। সুরক্ষিত সেলে হামলা চালিয়ে জঙ্গিদেরও ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। যদি তাদের উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা না থাকতো তাহলে জঙ্গি সেলে গিয়ে তালা ভাঙা হতো না।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, নরসিংদী কারাগারে হামলায় সরাসরি যারা জড়িত তাদের সবাইকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হবে। এর আগে যত ঘটনা, জঙ্গি হামলা হয়েছে, এসব ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের বাইরে উগ্রপন্থি জঙ্গিবাদে জড়িত ও গ্রেফতার হয়েছিল এমন ২/১ জনকে শনাক্ত করেছি। যাদের বিরুদ্ধে এই সংঘটিত সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনার মধ্যে সক্রিয় থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আরও গভীরভাবে কাজ করছে সিটিটিসি।

টিটি/ইএ