অর্থনীতি

কাজ করেনি মোবাইল অ্যাপ, দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

টানা তিন কার্যদিবস বন্ধ থাকার পর বুধবার (২৪ জুলাই) দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলেও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে কোনো বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারেননি। তবে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২৯১টি স্টেকহোল্ডারই নির্ধারিত সময়ে লগ ইন করে লেনদেনে অংশ নিয়েছেন।

Advertisement

একদিকে ইন্টারনেট সমস্যা অন্যদিকে মোবাইল অ্যাপ কাজ না করায় লেনদেনের গতিও কমে গেছে। ডিএসইতে দেড় বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। সেই সঙ্গে ভয়াবহ ক্রেতা সংকট থাকায় সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে সাড়ে তিনশো’র বেশি প্রতিষ্ঠান।

ডিএসই’র মতো অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে গত বুধবার এক দল আন্দোলনকারীর তাণ্ডবে রাজধানীজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। রাতে দুষ্কৃতকারীরা হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। রাতভর যাত্রাবাড়ীতে চলে সংঘর্ষ। বৃহস্পতিবারও টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলঅকায় চালানো হয় তাণ্ডব। আগুন দেওয়া হয় একাধিক পুলিশ বক্সে।

Advertisement

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বনানী ও মহাখালী টোলপ্লাজা, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন, মেট্রোরেলের স্টেশনে চালানো হয়েছে তাণ্ডব। রক্ষা পায়নি ফায়ার সার্ভিসও। মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে ফায়ার ফাইটারদের।

দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে তাণ্ডবের শিকার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়াম। বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো সরকারি স্থাপনায়ও তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক বক্স। হামলা চালানো হয়েছে থানাতেও।

পরিস্থিতি সামাল দিতে এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সঙ্গে নামানো হয় সেনাবাহিনী। এতে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে খুব একটা বের হননি। তবে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার পর অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শিথিল করা হয় কারফিউ।

রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। সীমিত পরিসরে চলছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। ব্যাংক খোলায় শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু করা হয়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো নয়, শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

Advertisement

বুধবার নির্ধারিতে সময় বেলা ১১টাতেই শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে লেনদেনের শুরুতেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম কমার তালিকায় চলে যায়। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ক্রেতা সংকট বাড়তে থাকে। বিপরীতে বাড়তে থাকে বিক্রির চাপ। ফলে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এতে লেনদেনের সময় গাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের পতনের মাত্রা।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৯৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৮ পয়েন্টে নেমে গেছে।

সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দেখা দেয় লেনদেন খরা। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারির পর ডিএসইতে সব থেকে কম লেনদেন হলো।

ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলেও আজকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারেননি। আবার ল্যাপটপ ব্যবহার করেও বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারেনি। যে কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল কম। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সবকিছু মিলেই বড় দরপতন হয়েছে এবং লেনদেন কম হয়েছে।

ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে না পারলেও আজ ২৯১টি স্টেকহোল্ডারই লগ ইন করেন এবং সবগুলো ব্রোকারেজ হাউজ লেনদেনে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে ব্রোকারেহ হাউজের বাহিরে বিনিয়োগকারীরা নিজেরা মোবাইল অ্যাপ ও ল্যাপটপ ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারেননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আবারও সব মাধ্যমে লেনদেন করা সম্ভব হবে।

এদিকে, ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ারের। কোম্পানিটির ৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, অগ্নি সিস্টেম, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রংপুর ফাউন্ড্রি, ওরিয়ন ফার্মা, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বিচ হ্যাচারি এবং জেমিনি সি ফুড।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২০৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৬টির এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

এমএএস/এসএনআর/এএসএম