আন্তর্জাতিক

কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতায় ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া

কমলা হ্যাারিস যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেন, তখন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তার মায়ের পূর্বসূরিদের গ্রামে আতশবাজি জ্বালিয়ে ধুমধাম করে আনন্দ প্রকাশ করা হয়। তবে চার বছর পর জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর যখন তিনি ডেমক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মনোনয়ন পেতে চলেছেন, তখন ভারতজুড়ে নীরব প্রতিক্রিয়া।

Advertisement

চলতি সপ্তাহে কমলার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির কিছু বাসিন্দা গর্ব অনুভব করেন। অনেকে আবার জানতে চান, তিনি কে? এতে অন্তত প্রতিফলন পাওয়া যায় যে হ্যারিস ভারতে কতটা জনপ্রিয়। হ্যারিস নিজে কৃষ্ণাঙ্গ ও তার বাবার জন্ম ক্যারিবিয়ান দেশ জামাইকায়।

উইলসন সেন্টারে সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলে, হ্যারিস তার ভারতীয় শেকড়টাকে প্রধান্য দেন না, বরং প্রাধান্য দেন তার জামাইকার ঐতিহ্যের উপর। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে তিনি খুব হালকাভাবে ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছেন। নিজের ভারতীয় ঐতিহ্যের উপর তেমন কোনো আলোকপাত করেননি।

গত বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন, তখন কমলা হ্যারিস তার প্রয়াত মা শ্যামলা গোপালনের জন্মভূমির কথা আবেগের সঙ্গে উল্লেখ করেন। তবে তামিল নাড়ুর রাজনৈতিক ভাষ্যকার সুমান্থ রামান বলেন, কমলা যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন উত্তেজনা ছিল। কিন্তু তারপরে তাকে নিয়ে বড় ধরনের কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি।

Advertisement

সুমান্থ রামান বলেন, রোববার (২১ জুলাই) বাইডেন প্রেসিডেন্টের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদে সমর্থন দেওয়া হয়। বিষয়টি ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের সংবাদমাধ্যমে তেমনভাবে উঠে আসেনি।

রামান বলেন, এখানকার খবরে জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি বড় শিরোনাম হয়েছে। কিছু ছিঁটেফোটা প্রসঙ্গ ছাড়া হ্যারিস ও তার ভারতীয় পরিচিতি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। কারণ ভারতে তার পরিবারের উল্লেখযোগ্য কোনো সদস্য নেই। ছোট বেলার সফর ছাড়া, হ্যারিস ভারতে যাননি আর ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তো নয়ই। এই বিষয়গুলো হয়তো প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার প্রার্থিতা ভারতে তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেনি।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, তারপরও হ্যারিস যদি ডেমক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন পান, তাহলে তিনিই হবেন এই পদে মনোনয়ন পাওয়া প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান। আর এই ঘটনা প্রমাণ করে যে প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে কতখানি এগিয়ে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, হ্যারিসসহ ভারতে শেকড় রয়েছে এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিকি হ্যালি থেকে শুরু করে বিবেক রামাস্বামী কিংবা ঊষা ভ্যান্স– সবাই যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে পরিচিত। তাছাড়া তারা নানাভাবে ভারতে তুলে ধরে।

Advertisement

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের চাইতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও ভারতীয়-আমেরিকান সমাজে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি ও নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব বলেন, ভারতীয়রা যখন কমলা হ্যারিসকে দেখেন, তখন তারা ভারতীয় বংশোদ্ভুত নয়, একজন মার্কিন কর্মকর্তা হিসেবেই দেখেন। তিন যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেটার কোনো উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে পড়েনি। তবে এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনিই জয়ী হন না কেন, চীনকে নিয়ে উদ্বেগের কারণে, তার সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক বাড়বে।

হিন্দি সাহিত্যের অধ্যাপক শিবাজি শিন্দে বলেন, হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে যদি ভারতের প্রতি নীতির কোনো পরিবর্তন নাও হয় কিংবা ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নাও পড়ে, তবুও তা ভারতীয় জাতির জন্য হবে ঐতিহাসিক ও অর্থবহ। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। তারা যদি ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজনকে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, সেটা হবে ভারতের জন্য বিশাল এক ঘটনা ও প্রতিটি ভারতীয় এর জন্য গর্ববোধ করবেন।

হ্যারিসের মায়ের পরিবার এক সময়ে যে গ্রামে থাকতেন সেই থুলাসেন্দ্রাপুরাম গ্রামেও এই খবর পৌঁছে গেছে। সেখানকার এক অধিবাসী সুধাকর জয়রামান বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে আমাদের গ্রামে শেকড় আছে, এমন একজন নারী ‍যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। গ্রামবাসীরা এই সংবাদ শোনার পর স্থানীয় মন্দিরে প্রার্থনা করেছেন। মন্দিরটি হ্যারিস ও তার মাতামহের দান করা।

সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা

এসএএইচ