দেশজুড়ে

রোগমুক্তির আশায় নিম গাছের নিচে মানত!

দেড়শ বছরের পুরোনো নিম গাছ। কেউ ঢালছেন গাভীর দুধ, কেউবা পিঠাপুলি আবার কেউ কেউ আতপ চাল। এখানে মানত করলে নাকি রোগমুক্তি আর মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ আশায় দূর দূরান্ত থেকে ছেলে বুড়ো সকলেই আসেন মানত করতে। কেউ আসেন মানত দেওয়ার জন্য।

Advertisement

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিমান্তবর্তী গ্রাম কুতুবপুরে অবস্থান এই নিম গাছের। প্রতিবছর মহররমের ১০ তারিখে আয়োজন করা হয় মেলার। সেইসঙ্গে গাছের নিচে দেওয়া হয় মানত বা শিরনী। তবে কারো মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে কি-না সে ব্যাপারে কেউ মুখ খোলেনি। আবার এর দালিলিক ভিত্তি আছে কিনা সেটাও জানাতে পারেননি আয়োজকরা।

মেহেরপুর গাংনী সীমান্তের কোল ঘেঁষে কুতুবপুর গ্রামের নদীর পাড়ে রয়েছে শতবর্ষী নিম গাছ। এ নিম গাছের নিচে মানত বা শিরনী দিলে নাকি মুক্তি মেলে। এ বিশ্বাসে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন মানত দিতে।

কাথুলী গ্রামের গৃহবধূ রোকসানা খাতুন এসেছিলেন তার ছোট বাচ্চা সামিকে নিয়ে। কী রোগের জন্য এসেছেন তা বলতে নারাজ। তিনি বাড়ির গাভীর দুধ, আগর বাতি আর কিছু টাকা এনেছেন। নিজ হাতে দুধ ঢাললেন গাছের গোড়ায়। জ্বালালেন আগর বাতি। করজোড়ে মিনতিও জানালেন। আর টাকাগুলো দিলেন গাছের গোড়ায় বসে থাকা দুজনকে। রোগমুক্তির আশায় এই মানত দিচ্ছেন বলে জানালেন তিনি।

Advertisement

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের রাফিউর জানালেন সেই ছোট বেলা থেকেই তিনি এখানে আসেন। তার নিজেরও অসুখ ছিল। তার বাবা মা এখানে মানত করে তা পরিশোধ করায় এখন সেই অসুখ সেরে গেছে। তাই কৃতজ্ঞতা জানাতে মহররম মাসের এই দিনে তিনি আসেন। গৃহবধূ জলি খাতুন এসেছিলেন সহগলপুর থেকে। তিনি তার মেয়ের সন্তান হয় না, তাই গাছের কাছে মানত করেন।

গাছ পাহারা দেওয়া তাহাজুল ও কারিজুল জানান, প্রতিবছর এইদিনে সকাল থেকে বসে গাছ পাহারা দেন তারা। রোগমুক্তির আশায় অনেকে দুধ ঢালেন, চাল ডালের খিচুড়ি, চিনি আর টাকা দেন অনেকেই। খিচুড়ি মানুষজনকে দেওয়া হয়। আদায় করা টাকা কী করেন জানতে চাইলে জবাব দিতে পারেননি তারা। তবে সারা দিনের পারিশ্রমিক হিসেবে উপস্থিত কয়েকজন ভাগাভাগি করে নেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, নিম গাছটির বয়স অন্তত একশ বছর। মহররমের এ দিনে মানুষজন এখানে এসে রোগমুক্তির আশায় মানত করেন। অনেকেই বলে রোগমুক্তি হয়েছে। আবার অনেকেই আশায় থাকেন রোগমুক্তির কিন্তু কেউ স্বীকার করেননি। তারপরও এখানে লোকজন ভিড় করেন মানত দিতে। তবে গুটি কতক লোক এই গাছকে পুঁজি করে ব্যবসা করছেন বলেও মতামত ব্যক্ত করেন তারা।

মেহেরপুর হোটেল বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা রোকনুজ্জামান জানান, মানত করা নাজায়েজ। গাছের কোনো ক্ষমতা নেই রোগমুক্তি করার। সর্বময় ক্ষমতা আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহর কাছে মুক্তি চায় তাহলে আল্লাহ মুক্তি দেবেন ইনশাআল্লাহ। রোগ হলে ডাক্তার আছে। সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে গাছের তলায় মানত দেওয়া বেদাত।

Advertisement

আসিফ ইকবাল/এফএ/জেআইএম