কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অভিযানে লাঠিসোঁটা ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এসময় দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিশ্রাম কক্ষেও অভিযান চালায় ডিবি। সেখানে খাটের তোষকের নিচ থেকে দুটি পাইপগান, কাঠের বাটযুক্ত পুরোনো তিনটি ওয়ান শ্যুটারগান, এক রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল এবং ২১০টি বাঁশের লাঠি তালিকামূলে জব্দ করা হয়।
Advertisement
নয়াপল্টন কার্যালয়ের ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। অভিযান শেষে লাঠিসোঁটা, বিস্ফোরকদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের তথ্য জানান ডিবিপ্রধান। এরপর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ (৩৮)সহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে ডিবি। এ ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় পরে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
লাঠিসোঁটা ও ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় বুধবার শ্রাবণসহ ২৬ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলাটি করে পুলিশ।
অভিযান শেষে রাতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ডিবিপ্রধান
Advertisement
বুধবার এ মামলায় শ্রাবণসহ সাতজনকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কবির হোসেন হাওলাদার। অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিক আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে দুদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
বিএনপির সভা কক্ষে মিলে ১০৫টি ককটেলরিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযানের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে শ্রাবণসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে আসামিদের ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র মজুতের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অকপটে অফিসে ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র আছে মর্মে স্বীকার করেন।
আরও পড়ুনছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রাবণসহ ৭ জন রিমান্ডেবিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা, ক্রাইম সিন ফিতায় ঘেরামাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে মধ্যরাতে অভিযান: রিজভীগ্রেফতার আসামি ও সাক্ষীদের নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় প্রবেশ করলে তল্লাশিকালে গ্রেফতারদের দেখানো মতে সেখানে সভা কক্ষের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বাথরুমের ফ্লোর থেকে লাল রংয়ের স্কচটেপে মোড়ানো ৫৫টি ককটেল এবং কালো রংয়ের স্কচটেপে মোড়ানো ৫০টি ককটেলসহ মোট ১০৫টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়। এসময় রুহুল কবির রিজভীর বিশ্রাম কক্ষের খাটের তোষকের নিচ থেকে দুটি পাইপগান, কাঠের বাটযুক্ত পুরোনো তিনটি ওয়ান শ্যুটারগান, এক রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল ও ২১০টি বাঁশের লাঠি জব্দ করা হয়।
আমিনুল-জয়নুলসহ ৩২৬ জনের নামে মামলানয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে লাঠিসোঁটা ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকসহ ৩২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন পুলিশ। মামলায় এজহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ২৬ জনকে। আর অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
Advertisement
রুহুল কবির রিজভীর বিশ্রাম কক্ষের খাটের তোষকের নিচ থেকে দুটি পাইপগান, কাঠের বাটযুক্ত পুরোনো তিনটি ওয়ান শ্যুটারগান, এক রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল ও ২১০টি বাঁশের লাঠি জব্দ করা হয়- ডিবি পুলিশ
রাজধানীর পল্টন থানায় বুধবার (১৭ জুলাই) এ মামলা করেন ডিবি পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এসআই ফরমান আলী। মামলায় ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট ও ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমিনুল হক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ও ডা. ফরহাদ হালিম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ার ও খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সাবেক যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহমেদ অসীম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।
পুলিশের মামলায় বুধবার কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে আদালতে তোলা হয়
এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়ন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলাম ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে।
শ্রাবণসহ সাত আসামি রিমান্ডেনয়াপল্টন কার্যালয়ে ডিবি পুলিশের অভিযানে লাঠিসোঁটা, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ বিএনপির সাত নেতাকর্মীর দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম (৪৭), তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন (৩০), বিএনপি কর্মী শাহাদাত হোসেন (৩২), মো. টেনু (৩৮), মনির হোসেন (২৫) ও বরকত হাওলাদার (৩৭)।
‘ডিবি আমাকে বাসা থেকে ধরে এনেছে, আমি কিছুই জানতাম না’মামলার শুনানিকালে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ আদালতকে জানান, আটকের সময় নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান বা মামলার বিষয়ে কিছুই জানতেন না তিনি।
আমি বিএনপি কার্যালয়ে ছিলাম না। ডিবি আমাকে বাসা থেকে ধরে এনেছে। সকালে জানতে পারলাম আমাকে এ মামলায় কোর্টে পাঠানো হচ্ছে। এখন আমাকে রিমান্ডে দিলে নির্যাতন করা হবে।- আদালতকে শ্রাবণ
শ্রাবণ আদালতকে বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। কয়েকদিন আগে শিল্পকলায় আমার ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে। আমি বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
আরও পড়ুনবিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযানে ককটেল-অস্ত্র উদ্ধার, আটক ৭বিএনপি নেতা আমিনুল-জয়নুলসহ ৩২৬ জনের নামে মামলাডিবি আমাকে বাসা থেকে ধরে এনেছে, আমি কিছুই জানতাম না‘(মঙ্গলবার রাতে) আমি বিএনপি কার্যালয়ে ছিলাম না। ডিবি আমাকে বাসা থেকে ধরে এনেছে। সকালে জানতে পারলাম আমাকে এ মামলায় কোর্টে পাঠানো হচ্ছে। এখন আমাকে রিমান্ডে দিলে নির্যাতন করা হবে’- আদালতকে বলেন সাবেক এই ছাত্রদল সভাপতি।
আমিনুল-জয়নুলসহ ৩২৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ১১ সেপ্টেম্বরনয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযানে লাঠিসোঁটা ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় বিএনপি নেতা আমিনুল হক, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ ৩২৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক মামলার এজাহার গ্রহণ করে এ দিন ধার্য করেন।
এজাহারে বলা হয়, ঢাকা মহানগর এলাকায় নাশকতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটিয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলাসহ দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করেছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় পুলিশ।
সেখানে আরও বলা হয়, অভিযানকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিশ্রাম কক্ষের খাটের তোষকের নিচ থেকে দুটি পাইপগান, পুরোনো তিনটি ওয়ান শ্যুটারগান, একটি পিস্তল ও ২১০টি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়।
জেএ/এমকেআর/জেআইএম