জাতীয়

কোটাবিরোধীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ: ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক

কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে আহত ছয়জন আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছয়জনসহ মোট নয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

Advertisement

বুধবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও পার্কভিউ হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর ও ষোলশহর এলাকায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হন। সংঘর্ষে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ শতাধিক ব্যক্তি।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ ৭৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই চিকিৎসা শেষে রাতে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আজ দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের আইসিইউ, ক্যাজুয়ালিটি, নিউরো সার্জারি ও অর্থপেডিকস বিভাগে ১৫ জন ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন দুজন। এছাড়া ক্যাজুয়ালিটি ও নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি আরও তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

আরও পড়ুন

চট্টগ্রামে সংঘর্ষ শুরু যেভাবেচট্টগ্রামে সংঘর্ষ: চার মামলায় আসামি সাড়ে ৭ হাজার

গুলিবিদ্ধ হয়ে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন মো. আকাশ (১৭) নামের এক কিশোর। সে পেশায় একজন গ্যারেজ কর্মী। গতকাল দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে ষোলশহর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় আকাশ।

ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. প্রান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘আকাশের পেটে এখনো বুলেট রয়ে গেছে। গত রাত থেকে তিন ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। বুলেট বের করতে অপারেশন করতে হবে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

Advertisement

আকাশের বাবা মো. এনাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুপুরে ভাত খেয়ে বাসা থেকে গ্যারেজে যাওয়ার সময় ষোলশহরে গুলিবিদ্ধ হয় আকাশ। রাস্তা থেকে কারা যেন তুলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। আমি ফোন পেয়ে হাসপাতালে আসি।’

নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছেন কলেজশিক্ষার্থী ইমন ধর। ভারী বস্তু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়। মাথায় ৪০টির বেশি সেলাই প্রয়োজন হয়েছে বলে জানান তার মা সুমি ধর।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘দুপুরের পর সিআরবিতে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়েছিল ছেলেটা। ষোলশহর-মুরাদপুরের মাঝামাঝি এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে সে আহত হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ছেলের অবস্থা ভালো নয়।’

এর আগে মঙ্গলবার রাতে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্টার ডা. সৌমেন জানিয়েছিলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনে আহত ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। গুরুতর হওয়ায় প্রায় সবারই ছোট-বড় অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।

তবে আজ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায় সকালের আগেই তাদের অনেকে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।

বুধবার অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক জনি সরকার বলেন, ‘হামলায় আহতদের অধিকাংশের পা-হাতে ইনজুরি। এছাড়া অনেকেরই মাধায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা রাতেই তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছি। অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে চলে গেছেন, কেউ কেউ বাসায় চলে যান। আইসিইউতে থাকা দুজনের অবস্থা ক্রিটিক্যাল।’

বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম বলেন, ‘সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন আইসিইউতে ভর্তি আছেন। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

তিনি জানান, সংঘর্ষে ঘটনায় গতকাল থেকে আহত ৪০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে পার্কভিউ হাসপাতালে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল তিনটা থেকে নগরের মুরাদপুরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মিছিল নিয়ে ষোলশহর থেকে মুরাদপুরের দিকে এগোতে থাকেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। ওই মিছিল থেকেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হলে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। পরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ।

এএজেড/কেএসআর/এএসএম