কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘আমি কে, তুমি কে; রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে লিখে সমালোচনার মুখে পড়েছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এ অধ্যাপকের লেখার একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। লেখাটির সত্যতা জানতে মোবাইল ফোনে জাফর ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে লেখাটি তার এবং স্বাক্ষরও তার বলে নিশ্চিত করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের সেই প্রতিক্রিয়া নিয়ে জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সামনে এসেছে নতুন তথ্য। মঙ্গলবার দিনগত রাতে জাফর ইকবাল নিজেই জাগো নিউজকে জানান, যে অংশটুকু ফেসবুকে ছড়িয়েছে, সেটুকুই পুরো লেখা নয়। লেখার একেবারে শেষ অংশ কে বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে তাতে তার কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান।
‘সাদাসিধে কথা’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকলে সেই লেখাটির পুরোটা এখন পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন জাফর ইকবাল। পরে ওই ওয়েবসাইটে (sadasidhe.com) ঢুকে জাফর ইকবালের নিজ হাতে লেখাটা পাওয়া যায়। সেখানে ‘কোটা’ শিরোনামে যে লেখাটা ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে লেখা হয়েছে, সেটি অসমাপ্ত বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
লেখাটির ওপরে হলুদ কাগজে ছোট্ট একটি চিরকুট। তাতে লেখা, ‘আমি এই লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলাম। শেষ করার আগেই জানতে পারলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রকম্পিত করেছে। এ লেখাটি শেষ করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে...’
আরও পড়ুনচাকরি দূরের ব্যাপার, তাদের দেশে থাকার অধিকার নেই: জাফর ইকবালকোটা নিয়ে লিখতে বসে ‘রাজাকার’ স্লোগানের খবর পান জাফর ইকবালজাফর ইকবালের লেখায় নেট দুনিয়ায় সমালোচনাঢাবিতে আর যেতে চাই না, ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে রাজাকারলেখাটির ওপরে হলুদ রঙের চিরকুট রাখায় পুরোটা পড়ার বা বোঝার সুযোগ নেই। ‘কোটা’ শিরোনামে সেখানে যেটুকু লেখা দেখা যাচ্ছে, তাতে ড. জাফর ইকবাল লিখেছেন, ‘পত্রিকা খুললেই সরকারি চাকরি কোটা নিয়ে আন্দোলনের খবর চোখে পড়ে। প্রথম দিকে আন্দোলনে শুধু ছেলেরা ছিল। আস্তে আস্তে দেখছি মেয়েরাও যোগ দিচ্ছে। এটার আমার... (হলুদ চিরকুটে ঢাকা)।’
চিরকুটে ঢাকা পড়া অংশ শেষে যেখান থেকে লেখা শুরু হয়েছে, তা হলো- ‘সবকিছুই আন্দোলন করে আদায় করতে হচ্ছে। আমি দর্শক হিসেবে দেখে যাচ্ছি, কখনো একটু খানি... (অস্পষ্ট), কখনো একটু খানি কৌতুক অনুভব করি। তার বেশি কিছু না। আমার ব্যক্তিগতভাবে আর কিছু চাইবার নেই। স্বাধীন একটা দেশ চেয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলাম, দুটোই পেয়ে গেছি। এখন যদি আরও কিছু পাই, সেটা হবে বোনাস! (তবে অস্বীকার করব না বেনজীর-আবেদ আলীদের সামলে সুমলে রাখলে একটু আনন্দ পেতাম।)’
জাফর ইকবাল আরও লিখেছেন, ‘আমরা সবাই জানি একটা দেশ যদি সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পায়, আর সবার যদি সমান অধিকার থাকে, তাহলে কোটার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি না থালে তাহলে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা রাখা একটি মানবিক ব্যাপার। অবশ্য মানবিক ব্যাপার কথাটা একটু খানি বইয়ের ভাষা, সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত কয়জনের আর অন্যদের মানবিক ব্যাপার নিয়ে মাথা ব্যথা আছে।’
Advertisement
‘যদি কোটার ব্যাপারটা সহজভাবে দেখি, তাহলে বলা যায় দুই রকম কোটা আছে। একটা ভালো, অন্যটা খারাপ। প্রথমে খারাপটার কথা বলি, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কোটা। যেটাকে পোষ্য কোটা বলে। আমি খুঁটিনাটি জানি না। সম্ভবত পোষ্য কোটা শুধু শিক্ষকদের জন্য না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্যও খোলা। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকদের সন্তান ছাড়া আর কোনো সন্তান সেই সুযোগ ব্যবহার করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এ পোষ্য কোটা নিয়ে কখনও কোনো উচ্চবাচ্চ্য শুনিনি। যদিও পোষ্য কোটার ছাত্র-ছাত্রীরা পাস করার পর আবার তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক বানাবার একটি নতুন চাপ শুরু হয়। নিজের চোখে দেখা।’
‘আর ভালো কোটার উদাহরণ হচ্ছে’ এটুকু লেখার পর আন্ডারলাইন করে ব্র্যাকেটে তিনি লিখেছেন, ‘লেখাটি শেষ না করে নিচের অংশটুকু লিখেছি।’
নিচের অংশে ড. জাফর ইকবাল লিখেছেন, ‘ঘুমানোর আগে খবরটি দেখে মাথার মাঝে একটা বিস্ফোরণ হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে দাবী করেছে। খবরটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না। এটি কী সত্যিই সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী কি সত্যিই নিজেকে রাজাকার হিসেবে দাবী করতে পারে? শুধুমাত্র একটা সরকারি চাকরির জন্য? কোন দেশের সরকার, বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান?’
তিনি আরও লেখেন, ‘এই ছাত্র-ছাত্রীরা কী জানে, চাকরি অনেক দূরের ব্যাপার, তাদের যে এই দেশের মাটিতেই থাকার অধিকার নেই।’
একটু জায়গা রেখে তার নিচের প্যারা জাফর ইকবাল লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইবো না। ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন। সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’
এএএইচ/এমআরএম/জেআইএম