ধর্ম

আশুরার দিন ফজিলতপূর্ণ যে কারণে

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মাস, হাদিসে এ মাসটিকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। এ মাসের রোজাকে রমজানের রোজার পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

Advertisement

أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ

রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামায। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৬)

এ মাসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো ১০ তারিখ যাকে আমরা আশুরার দিন বলি। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দিন রোজা রেখেছেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখতে বলেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজান মাসের রোজা ও আশুরার দিনের রোজার মতো অন্য কোনো রোজাকে এত বেশি গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি: ২০০৬)

Advertisement

এ দিনের বিশেষ মর্যাদার কারণ সম্পর্কে বিশুদ্ধ সূত্রে পাওয়া যায় যে, এ দিন হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। যে কারণে হজরত মুসা (আ.) এ দিন রোজা রাখতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এটি একটি উত্তম দিন যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের মুক্তি দিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) এ দিন রোজা রাখতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমাদের চেয়েও মুসার (আ.) অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিন রোজা রাখেন, অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)

এ ছাড়া কিছু বর্ণনায় এসেছে, আশুরার দিন আল্লাহ তাআলা নবি আদমকে (আ.) ক্ষমা করেছিলেন, নবি নুহ (আ.) ও তার সঙ্গীরা নিরাপদে নৌকা থেকে অবতরণ করেছিলেন, আল্লাহর নবি ও খলিল ইবরাহিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো কোনোটিই নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয়।

আশুরার দিন রোজা রাখার ফজিলত

আশুরার দিন রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ

Advertisement

আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬১৭)

আশুরার দিন ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা

আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওফাতের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর তার নাতি হজরত হোসাইন (রা.) আশুরার দিন অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন। তাই এ দিন মুসলমানরা হজরত হোসাইনকেও (রা.) বিশেষভাবে স্মরণ করে, তার ত্যাগের আদর্শের কথা স্মরণ করে। তবে এ ঘটনা আশুরার দিনের বিশেষ ফজিলত ও রোজা রাখার কারণ নয়।

ওএফএফ/জেআইএম