চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে সারাদেশে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
Advertisement
সোমবার (১৫ জুলাই) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও একদফা দাবিতে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
অপরদিকে মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, রাজাকারের সাফাই এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে একই দিন বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি ঘোষণার জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্তেজনা বিরাজ করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান নেন।
Advertisement
এদিন রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫) বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। পরে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে একজন মারা যান।
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানিচট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী, একজন পথচারী এবং অন্যজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহত শিক্ষার্থীর নাম ওয়াসিম আকরাম (২৩)। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। নিহত পথচারীর নাম মো. ফারুক (৩৩)।
Advertisement
নিহতদের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ২ রংপুরে সংঘর্ষে বেরোবি শিক্ষার্থী নিহত ঢাকা কলেজ এলাকায় সংঘর্ষে যুবক নিহতএদিন চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর-ষোলশহর এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ছাত্রলীগের কারও কারও হাতে অস্ত্রও দেখা যায়।
ঢাকায় দুই যুবক নিহতকোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবারের সংঘর্ষে ঢাকায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কলেজের পাশ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় শাহজাহান (২৬) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের খালু মোসলেম জানান, শাজাহান নিউমার্কেটের ফুটপাতে পাপোশ বিক্রি করতেন।
শাহজাহানকে উদ্ধার করে প্রথমে পপুলার হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন চালক আলী ও তার সহযোগী শাকিল।
এর আগে ঢাকা কলেজ এলাকায় সংঘর্ষে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক (২৭) নিহত হন। মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক পথচারী। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পথচারীসহ এখন পর্যন্ত ১০৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
স্কুল-কলেজ-পলিটেকনিক বন্ধ ঘোষণা বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত ঢাকা-চট্টগ্রাম-বগুড়া-রাজশাহী-রংপুরে বিজিবি মোতায়েনমঙ্গলবার দিনভর রাজধানী ঢাকা ছিল রণক্ষেত্র। কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। আবার কোথাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সন্ধ্যার পরও রাজধানীজুড়ে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা কলেজ এলাকা, সায়েন্সল্যাব মোড়, মহাখালী এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে।
ঢাকার বাইরেও দিনভর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
মঙ্গলবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাশাপাশি চলমান এইচএসসি ও সমমানের বৃহস্পতিবারের (১৮ জুলাই) সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। ফলে ওইদিন ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। তবে আগামী ২১ জুলাইয়ের পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।
ইএ/জেআইএম