দেশজুড়ে

বগুড়ায় ব্যাপক ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় ব্যাপক ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

Advertisement

আওয়ামী লীগ অফিস ও বগুড়া টাউন ক্লাবে ভাঙচুর, পুলিশ বক্স ও চারটি মোটরসাইকেলে আগুন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাতমাথায় এলে ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সাতমাথায় সমবেত হলে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে পিছু হটেন। পরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় অন্তত চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসময় ইটপাটকেলের আঘাতে এক সাংবাদিক ও এক শিক্ষার্থী আহত হন।

Advertisement

একপর্যায় পুরো সাতমাথা এলাকা শিক্ষার্থীরা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় বেশিরভাগ আন্দোলনকারীর হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের দিকে গেলে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে মুজিব মঞ্চের সামনে এসে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

পুরো সাতমাথায় লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তাদের অবস্থানের কারণে পুরো সাতমাথা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সাতমাথাকেন্দ্রিক সবগুলো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় আশপাশের দোকানপাট ও মার্কেট। পাশাপাশি সড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এমনকি রাস্তা বিভাজকে ব্যবহৃত লোহার শিটও তারা ভেঙে ফেলেন। ক্রমেই আন্দোলনকারীদের সহিংসতা বেড়ে যায়।

একইদিন সকালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কলেজের মেইন গেটের সামনে সড়ক অবরোধের পর এ ঘটনা ঘটে। এতে চার শিক্ষার্থী আহত হন।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের তাফসির, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সুমন রানা এবং অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মামুন ও মিলন। পরে আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

Advertisement

আহত শিক্ষার্থী তাফসির বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা কলেজের সামনে তিনমাথা সড়ক অবরোধ করি। প্রায় ২০ মিনিট আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলে। কর্মসূচি শেষ করে কলেজ থেকে ফিরছিলাম। এমন সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হলে আমরা দুজনই আহত হই। এছাড়া আরও দুজন আহত হয়েছেন।

এদিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধের ঘণ্টাখানেক পরে মহাসড়ক থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয় বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাতমাথায় অবস্থান করার সময় কোটা আন্দোলকারীরা চারপাশ থেকে হামলা করে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা আন্দোলনের নামে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে।’

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

এসআর/এএসএম