চট্টগ্রামে সংঘর্ষের সূত্রপাত ছাত্রলীগের এক মিছিল থেকে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আজ মঙ্গলবার নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ১২টা থেকেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে কয়েকশ ছাত্রলীগকর্মী রেলস্টেশনে অবস্থান নেন। এসময় মুরাদপুর মোড়ে অবস্থান নেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মিছিল নিয়ে মুরাদপুরের দিকে এগোতে থাকেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রাস্তার আশপাশে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী ও পথচারীদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। ওই মিছিল থেকেই মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথমে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা হয়। পরে শুরু হয় গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ। এসময় কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছিল দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।
সংঘর্ষ শুরু হলে চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশ অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে মুরাদপুর মোড়ের নিয়ন্ত্রণ নেন। এসময় শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় পাশের অলিগলিতে ঢুকে পড়েন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর রাস্তায় অবস্থান নেয় পুলিশ। এসময় প্রায় ৪০ মিনিট বিভিন্ন ভবনে ও গলিতে আশ্রয় নেওয়া ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবারও একত্রিত হয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু করেন যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ হতে থাকে, এর মধ্যেই চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। সংঘর্ষ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিত ছিল না।
Advertisement
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন আলী মোহসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পূ্র্বঘোষণা অনুযায়ী আমাদের কর্মসূচি ছিল। ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা মুরাদপুরে পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত প্রায় অর্ধশত।’
সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থী ও এক পথচারী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক।
নিহত মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।
সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন।
Advertisement
এদিন সংঘর্ষ চলাকালে একের পর এক আহত শিক্ষার্থীকে রিকশা ও ভ্যানে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সভাপতি নুরুল আজিম রনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু আমাদের মিছিল থেকে হামলা হয়নি, সব মিছিল থেকে হামলা হয়েছে; গুলি করা হয়েছে। আমার মুরাদপুরের ঘরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করা হয়েছে, নারীদের গায়ে হাত তুলেছে। এরা কি ছাত্র?’
এএজেড/কেএসআর/জেআইএম