আইন-আদালত

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়া হচ্ছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধাসহ বিদ্যমান কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ে আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা দেওয়ার পরও কোটাবিরোধীদের দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

এসময় তিনি জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। লিভ টু আপিলে হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের পেছন থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

Advertisement

নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘ছাত্ররা প্রথমে হয়তো একটি উদ্দেশ নিয়ে আসছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের পেছন থেকে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে। যারা বুদ্ধি দিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য অন্য, তারা এটা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য করছে।’

এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য বলেছেন তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তারা আদালতে আসতে পারেন। আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারনে। যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন। কিন্তু তারপরও এটা নিয়ে আন্দোলন করা অযৌক্তিক।’

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়ার পরই আপিল করলো রাষ্ট্রপক্ষ।

রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সে রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি–নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি–ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ (যদি অন্যান্য থাকে) সব কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

তবে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটাপূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় বিবাদীদের স্বাধীনতা রয়েছে।’

আরও পড়ুন:

কোটা বহালে হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ও কোটা সংস্কারের দাবি

এদিকে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া এই রায় স্থগিত চেয়ে ঢাবির দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে আইনি বিরোধের বিষয়বস্তুর ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) দেন। সেই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (সিপি) করেতে বলা হয় এবং পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের আন্দোলনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। যেখানে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫ ও প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।

এই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/এসএইচএস/এএসএম