কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা হলে ঢুকতে পারেননি, তাদের আবাসনের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালমান মুক্তাদির। এমনকি হামলায় আহতদের মধ্যে যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন, তাদেরও সহায়তা করবেন তিনি।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ঘোষণা দিয়েছেন এই তরুণ অভিনেতা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
আজ ভোর সাতটায় ফেসবুক পোস্টে সালমান মুক্তাদির লিখেছেন, ‘এমন কোনো শিক্ষার্থী আছেন যিনি হামলার শিকার হয়েছেন বা হলে ঢুকতে পারেননি? আমি আপনাদের খেয়াল রাখব। তবে লাখ লাখ মেসেজ বা পোস্টের মধ্যে আপনাদের খুঁজে বের করা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আপনাদের কোন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আছে কি না দেখুন এবং তাদের মাধ্যমে আমাকে জানান।’
সালমান মুক্তাদির আরও লিখেছেন, ‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি আপনাদের জন্য সর্বোচ্চ এতটুকুই করতে পারব। আপনার যদি থাকার জায়গার দরকার হয় অথবা চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হয়, আমি আছি। কেবল কিছু ভিডিও দেখলাম, অনেকে হলে ঢুকতে পারছেন না। আবারও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যদি এতটুকু যথেষ্ট না হয়। আমার সত্যিই খুব খারাপ লেগেছে এবং বিব্রত। এত জনপ্রিয়তার পরও আপনাদের জন্য কিছু করতে না পারায় আমি লজ্জিত।’
Advertisement
গতকাল সোমবার দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার দিনগত রাতেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনেকেই আতঙ্কে হলছাড়া হয়েছেন।
অনেকেই ওই পোস্টে সালমান মুক্তাদিরের প্রশংসা করেছেন। ধন্যবাদ দিয়ে কেউ লিখেছেন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তার সমর্থনের কথা তারা আজও মনে রেখেছেন। আবার সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে কেউ কেউ লিখেছেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি যেন বিপদে না পড়েন। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যখন সারাদেশ উত্তাল, এ রকম সময়ে কয়েকদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ভূমিকা পালন করছেন সালমান মুক্তাদির।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সোমবার উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েকশ আন্দোলনকারী। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। রোববার রাতে তাদের ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার, কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ স্লোগান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার আলাদা অনুষ্ঠানে তাদের স্লোগানের এ ভাষার তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর বিকেলে ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ। দুপুর ২টার দিকে তারা বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেন। এ খবরে আন্দোলনকারীরা ছুটে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। উভয়পক্ষ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর থেকে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
Advertisement
বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বহু আন্দোলনকারীকে পিটিয়ে আহত করে তারা। তাদের অনেকের মাথা ফেটে যায়। আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। ফলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও গেছেন কেউ কেউ। এরপর সোমবার দিবাগত রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
আরএমডি/এমএমএআর/এমএস