সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। এসময়ে নিজের অবস্থা এবং অবস্থান জানিয়ে নিজের ভেরিয়ায়েড ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
Advertisement
‘গতকাল আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যখন হামলা হচ্ছিল, আমি দৌড়ে বের হতে নিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী চিৎকার করে বললো, মাথা খারাপ তোমার! আমি বললাম, না যেতে হবে। তারপর মনে হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয়, এই সরকার তো চিনি আমি। বের হয়ে কলাভবনে যাওয়ার আগেই আমাকে মেরে শুইয়ে ফেলা হবে। তারপর প্রচারণা চলবে, কোটার এই আন্দোলনের পেছনে আসলে আমিই ছিলাম। কেউ কেউ প্রশ্ন করবে, আসলে কী উদ্দেশ্যে সেখানে গেলাম আমি!
এসব ভেবে ভেবে অস্থির হয়েছি, আবার নিজেকে ধিক্কারও দিয়েছি। উপাচার্য স্যারকে বারবার ফোন করেছি, প্রক্টরকে খুঁজেছি, সাংবাদিকদের বলেছি। আর কিছুই করিনি। তবু একটু পর অনলাইনে দেখি ছাত্রলীগের এক নেতা আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিতে আমাকে দায়ী করেছেন! আমাকে!!
ভাবলাম ছাত্রদের বাঁচাতে তাহলে অন্তত কয়েকজন মিলে যাই। প্রগতিশীল তিনজন অধ্যাপককে ফোন করলাম। একজন ধরলেন না, একজন বললেন তিনি নেই ক্যাম্পাসে, আরেকজন বললো, এখন যাওয়া ঠিক হবে না।
Advertisement
আমার অস্থিরতা বাড়তে থাকে। পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিলাম, ফেসবুকে লিখলাম। রাতে আর না পেরে ঢাবি, মেডিকেলে আহত ছাত্রছাত্রীদের দেখতে গেলাম। অপরাধবোধ কিছুটা কমলে ঘুমাতে পারলাম অনেক রাতে।
সকালে উঠে মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে আমিও কাপুরুষে পরিণত হচ্ছি সম্ভবত। আগে কতবার ছাত্রদের পাশে দাঁড়ালাম, কখনো একদম একাই দাঁড়িয়েছিলাম। কাল কেন পারলাম না?
আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শহীদ শামসুজ্জোহার উদাহরণ দেন কেউ কেউ। উনার মতো আমরা হতে পারিনি। তবে কেউ কেউ কিছুটা হলেও প্রতিবাদ করেছি আগে বহুবার। কিন্তু পাশে থাকা মানুষ কম পেয়েছি, এখন আরও কমছেন তারা। বহুবছর ধরে একসঙ্গে কাজ করেছি, এমন কেউ কেউ এখন সামান্য বিবৃতি দিতেও ভয় পান।
ফেসবুকে তো অনেকে লেখেন। আসেন না নিজেরা সবাই মিলে দাঁড়াই একদিন রাস্তায়। কোনো সংঘাত না, কোন উস্কানি না, দাঁড়িয়ে জাস্ট বলি: আমাদের সন্তানদের উপর হামলার বিচার চাই।
Advertisement
এটাও যদি না পারি একটা অন্তত বিবৃতি দেই।’
এমএইচআর/জিকেএস