রাজনীতি

দেশের সবাইকে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আহ্বান মান্নার

দেশের সবাইকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

Advertisement

সোমবার (১৫ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ আহ্বান জানান।

মান্না বলেন, আমি উদত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি, এই দেশের যারা নিরীহ মানুষ, ওই ছাত্রদের যারা গার্ডিয়ান-মুরব্বি, যারা দেশের বিবেক, যারা স্বাধীনতার কথা ভাবেন, যারা রাজনীতি করেন বা করেন না, সমাজের কাজের মধ্যে আছেন- প্রত্যেকে আসুন, নিজের কথা বলুন যে আমরা ছাত্রদের এই ন্যায্য দাবির সঙ্গে আছি।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের যে নির্যাতন তার তীব্র নিন্দা করছি। আমি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও বলবো, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন। এরকম করে একের পর এক সন্ত্রাসের থাবা যদি বিস্তৃত হতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কখনোই কথা বলতে পারবে না। আমাদের বুক-পিঠ এক হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

Advertisement

মান্না বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি তো খুব স্বাভাবিক ছিল, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তো কেউ অসম্মান করেনি। মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধ করেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কাজেই সেই মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান জানানো, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর ব্যাপারে আমাদের কারোই আপত্তি থাকার কথা না। আর সেই আপত্তি থাকলে কেউ গ্রহণও করবে না। কিন্তু ৫৪ বছর পর যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের ছেলেমেয়েও নন, তাদের নাতি-পুতিদের জন্য বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে এবং সেটাও সরকারি চাকরির ক্ষত্রে শতকরা ৫৬ ভাগ (আসলে ৩০ শতাংশ), এটা তো চলতে পারে না। এই ছিল ছাত্রদের দাবি। আজ এখন পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনীতির কথা বলেননি, কোনো দলের কথা বলেননি, সরকারের সমালোচনা করে বা সরকারের পদত্যাগ বা সরকারের বিশেষ কোনো শাস্তি দাবি করেননি।

শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি ওই ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম। যদি মনে করেন অত্যাচার করে, মামলা দিয়ে, লাঠিপেটা করে, তাদের ওপর নির্যাতন করে, হল থেকে বের করে এই আন্দোলন দমন করতে পারবেন, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

আরও পড়ুন

শহীদুল্লাহ হলের সামনে সংঘর্ষ চলছে, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ কোটা আন্দোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শক্ত হাতে দমন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১৫৫ আন্দোলনকারীদের রাজাকার স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে: কাদের

‘আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের নির্দিষ্ট বক্তব্য আছে, আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য দেই। আমরা মনে করি এই সরকার অবৈধ সরকার। নির্বাচিত সরকার না। জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ শাসন করেন না, অতএব নতুন করে নির্বাচন করতে হবে এবং সেটা এই সরকারের অধীনে হবে না। কিন্তু যেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, তারা এখন রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেননি। তারা দেশের মানুষের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন। তারা জানেন জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে। তারা জানেন সরকার ভারতের সঙ্গে এরকম একটা চুক্তি করেছে, এরকম একটা স্মারকে সই করেছে যেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা আঘাতের মতো। তারা জানেন বাংলাদেশ ঘুস দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ছাত্ররা এগুলো পছন্দ করেন আমি এমনটা মনে করি না। এ দেশের যুবসমাজ, পৃথিবীর কোনো দেশের যুবসমাজ অন্যায় প্রশ্রয় দেয় না। বলাই হয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাই হচ্ছে যুবসমাজের ধর্ম। কিন্তু তারপরও ছাত্রদের চিন্তা হলো আমরা লেখাপড়া করবো, পাস করবো, কিন্তু পাস করবার পর আমি মেধার কারণে চাকরি পাবো না, চাকরি পাবে কেবল দলীয় কোটার ভিত্তিতে, এটা চলতে পারে না। এই দাবির মধ্যে অন্যায্যতা কী?

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ২০১৮ ছাত্ররা বলেছিলেন কোটা সংস্কার চাই। তখন প্রধানমন্ত্রী রাগ করে বলেছিলেন কোটাই বাতিল করে দিলাম। এখন সেই বাতিল করার পরে এখন যদি নতুন করে তারা আবার আদালতের রায় নিয়ে আসে যে সেটাকে পুনর্বহাল করা হলো, সেটা তো কোনো কাজের কথা হবে না। এটা কোনো আইনিসিদ্ধ কাজও হবে না। এজন্য আমরা সবসময় বলি, যদি আদালতই রাজনীতি নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে তো আদালত নির্বাচনও নির্ধারণ করে দিতে পারতো। তাই রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে।

আন্দোলন প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, এটা আদালতের কোনো কাজ না। আদালতকে কোনো কিছু বলার আগে খেয়াল করতে হবে, এই কথা পরিষ্কারভাবে সংবিধানে আছে যে, যারা অনগ্রসর অংশ তাদের জন্য কোটা থাকবে। বাকিদের কোটার কথা বলা নেই। এই প্রেক্ষিতে ছাত্ররা বলছেন তাদের জন্য যতটা সম্ভব রেখে বাকিটা মেধার ভিত্তিতে দিয়ে দেন। আমরা বলতে চাই, আমরা পুরোপুরি এই দাবি সমর্থন করি। আমি ছাত্রদের আন্দোলন শুধু সমর্থনই করি না, আমি বিশেষভাবে তাদের ধন্যবাদ দেই তারা এত উসকানির পরও শান্তভাবে, নিরীহভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করার চেষ্টা করছেন।

সংগঠনের সভাপতি এম গিয়াসউদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।

কেএইচ/ইএ/এএসএম