নকশা ও প্ল্যান পাস, প্রকল্প অনুমোদন ও ম্যাপ অনুমোদনের নম্বর এবং তারিখ উল্লেখ ছাড়া রিয়েল এস্টেট এবং প্রতারণা করে একই প্লট ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির নামে কয়েকবার বিক্রির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে রিহ্যাবসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া রিয়েল এস্টেট আইন-২০১০ বাস্তবায়নের নির্দেশনাও লিগ্যাল নোটিশে চাওয়া হয়েছে।
Advertisement
ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে রোববার (১৪ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন এই নোটিশ পাঠান।
লিগ্যাল নোটিশে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের (স্থানীয় সরকার বিভাগ) সচিব, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (মহাপরিচালক) ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাবের) সভাপতিকে বিবাদী করা হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী জে আর খান রবিন নিজেই। তিনি বলেন, আইনগত প্রতিকার চেয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন:
বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদার সুযোগ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত আবাসন শিল্পে সংকট, ফ্ল্যাট বিক্রিতে ভাটানোটিশে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ডেভেলপার/রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ওই আইনের ৫ ও ৬ ধারা এবং উপ-ধারা অমান্য করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, অর্থাৎ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রকল্প ও নকশা অনুমোদন না করে, প্রসপেক্টাসে ম্যাপ ও প্রকল্প অনুমোদনের নম্বর, স্মারক ও তারিখ উল্লেখ না করে রিয়েল এস্টেটের জমি বিক্রি করছেন। এতে অনেক রিয়েল এস্টেট ক্রেতাই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
কারণ যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকল্প ও নকশা অনুমোদিত না থাকায় ডেভেলপার/রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ক্রেতার কাছে রিয়েল এস্টেটের জমি হস্তান্তরে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট রেজিস্ট্রি করলেও দখল হস্তান্তর করতে পারছেন না বা করছেন না। কখনও কখনও কোনো কোনো রিয়েল এস্টেট ক্রেতা মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে রিয়েল এস্টেট থেকে কিনে নিজের জীবনের সব সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না থাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গড়ে উঠেছে।
শুধু তাই নয়, ভূমি উন্নয়ন আইন, ২০০৪ এর বিধানাবলি অমান্য করে বিভিন্ন ডেভেলপার/রিয়েল এস্টেট কোম্পানি আইনের তোয়াক্কা না করে জলাশয়সহ মানুষের কৃষি ও বসবাসের জমি ধ্বংস করে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ রিয়েল এস্টেট ক্রেতাদের নানারকম মুখরোচক প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্রেতার শেষ সম্বলটুকু হাতিয়ে নিচ্ছেন। যাতে রিয়েল এস্টেট ক্রেতাদের মৌলিক অধিকার ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় একাধিক খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
Advertisement
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে দেশে বেআইনিভাবে সব রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ আইনবহির্ভূতভাবে রিয়েল এস্টেট বিক্রি ও বিজ্ঞাপন বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যথায় দেশের প্রচলিত আইন সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবে এবং প্রয়োজনে দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে নোটিশ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।
আরও পড়ুন:
ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশে লিগ্যাল নোটিশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি নির্ধারণে নীতিমালা করতে নোটিশদেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে অবগত এবং সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অনুবলে জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন বলেন, আইন অনুযায়ী প্রকল্প অনুমোদন না নিয়ে এবং ম্যাপ পাস না করে কেউ প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারবে না। এছাড়া রিয়েল এস্টেট কোম্পানি যে সব প্রসপেক্টাস তৈরি করে, সেই প্রসপেক্টাসে প্রকল্প অনুমোদন ও ম্যাপ অনুমোদনের নম্বর এবং তারিখ উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি এসবের তোয়াক্কা না করে, নামমাত্র ৫ থেকে ৬ কাঠা জমি কিনে প্লট বিক্রি করতে শুরু করে।
তিনি বলেন, এভাবে বিক্রি করে যেটা হয় একসময় রেজিস্ট্রি করে নথি দিলেও জমি দিতে পারে না। পরে ক্রেতা আর জমি দখল নিতে পারেন না। কারণ, অনেক রিয়েল স্টেট কোম্পানি প্ল্যান পাস না করিয়েই প্লট বিক্রি শুরু করে। দেখা যায় একই প্লট কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করছে বা করেছে। যদি প্ল্যান পাস করে রিয়েল এস্টেট এর কাজ শুরু করে তাহলে একটি প্লট একবারের বেশি বিক্রি করার সুযোগ থাকে না।
নোটিশে ২০১০ সালের রিয়েল এস্টেট আইনের সব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।
এফএইচ/এসএইচএস/এমএস