দেশে তামাকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭ কোটি ৬২ লাখ মানুষ। এর মাঝে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হয়।
Advertisement
সোমবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আয়োজিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে করণীয় শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেওয়া হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশান অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ( বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এহতেশামুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। তাই এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো সিএসআর এর নাম করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে; অন্যদিকে আধুনিকতার টোপ দেখিয়ে-সিগারেটের মতন নিত্যনতুন পণ্য তরুনদের হাতে তুলে দিয়ে বাজার সম্প্রসারণ করছে। এই আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য আইনকে শক্তিশালী করার আর কোন বিকল্প নেই।
Advertisement
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম সোহেল বলেন, তামাকের পক্ষে কোন যুক্তি নেই। জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি এর ক্ষতির ভয়াবহতা বহুমুখী। তামাক থেকে যে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে তার থেকে তামাকজনিত রোগের পেছনে সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এখানেও ক্ষতির পরিমাণই বেশি। এসব দিকগুলোকে নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের আর্থিক ও যেসব স্বাস্থ্য ক্ষতি হয়ে থাকে:
১. দেশের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা প্রাপ্তবয়স্ক ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহার করে।
২. পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ।
Advertisement
৩. তামাকের ব্যবহারে পঙ্গুত্ব বরণ করে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ।
৪. বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ৬টির সঙ্গেই তামাক জড়িত।
৫. বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজনিত রোগ যেমন ফুসফুসে ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশের বেশি। এছাড়া তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশের বেশি।
৬. টোব্যাকো অ্যাটলাসের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্যে বছরে মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ তামাকের কারণে হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে ৬ টি দাবি উপস্থাপন করা হয়:
১. ধূমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত করা।২. বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন বন্ধ করা।৩. তামাক কোম্পানির সিএসআর বন্ধ করা।৪. খুচরা শলাকা ও তামাকদ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা।৫. ই সিগারট বা এইচটিপি নিষিদ্ধ করা।৬. প্যাকেটে / কৌটায় সচিত্র সতর্কবার্তার আকার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ করা।
এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডরপের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় সেমিনারে শুভেচ্ছা ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন ডরপের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা এএইচএম নোমান, লীড পলিসি এডভাইজার, সিটিএফকের সাবেক সচিব এবং বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইল জেলা সমিতির সভাপতি ড. মো. ইব্রাহীম হোসেন খান প্রমুখ।
এএএম/এসআইটি/এমএস