দেশের প্রথম রাষ্ট্রীয় ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মেরিনা খাতুন। গত ৭ জুলাই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) প্রমথ রঞ্জন ঘটক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
Advertisement
সোমবার (১৫ জুলাই) তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা জাগো নিউজকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রোববার ডাকযোগে মেরিনা খাতুন এ স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি চিঠি হাতে পেয়েছেন।
এর আগে মেরিনা খাতুন ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। পরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকার) ৮২তম সভায় মেরিনাকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রীসভায় প্রস্তাবটি পাঠায়। এরপর মন্ত্রীসভা তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয় জামুকাকে। এ সিদ্ধান্তের আলোকে জামুকার ৮৯তম সভায় মেরিনাকে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এখন সরকারের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসন মেরিনার দেখভাল করবে বলে জানান ইউএনও।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাক সেনা ও তাদের দোসরদের পাশবিক নির্যাতনে বিধবা বীরাঙ্গনা পচি বেওয়ার গর্ভে জন্ম নেন মেরিনা খাতুন। লোকলজ্জার ভয়ে গর্ভেই মেরিনাকে শেষ করতে চাইলেও অন্য সন্তানদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তার জন্ম দেন মা। রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৮ সালে মা পচি বেওয়ার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির পর ২০২২ সালে মেরিনা খাতুন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিজেকে যুদ্ধশিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে। দীর্ঘ সময় পর এই স্বীকৃতির কারণে এখন থেকে পিতার নাম অজ্ঞাত রেখেই রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন মেরিনা।
Advertisement
মেরিনার স্বজনরা জানান, এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ায় তারা উচ্ছ্বসিত। নানা কটুকথা শুনলেও এখন সেই কষ্ট আর মনে রাখছেন না তারা।
এদিকে হাতে চিঠি পেয়ে আবেগে আপ্লুত হন মেরিনা খাতুন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এমন স্বীকৃতিতে উচ্ছ্বসিত তার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তবে তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মাসিক ভাতা দেওয়ার কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় খানিকটা হতাশও হয়েছেন তারা। সরকার এ বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবে এমনটাই ভাবছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় জনসাধারণ।
তবে বয়স বিবেচনা করে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মেরিনা খাতুনকেও ভাতা দেওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করে উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশেদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, যুদ্ধশিশু হিসেবে মেরিনার এই স্বীকৃতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
এম এ মালেক/এফএ/জেআইএম
Advertisement