বছরের পর বছর বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমাদের জন্য কষ্টের। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধা নিয়ে অপরাধী, বাটপাররা বিসিএসের মত চাকরিতে চলে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এতে প্রকৃত মেধাবীরাই বঞ্চিত হয়।
Advertisement
এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে রোববার (১৪ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালত বলেন, ‘বিসিএসের মতো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন বারবার ফাঁস হবে? এটা উদ্বেগের! পিএসসিতে যারা আছেন তারা কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে পারছেন না? যদি না পারেন তাহলে তারা দায়িত্ব পালনে অযোগ্য।’
বিসিএসের মত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সারডা সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের প্রধান আরিফুর রহমান মুরাদ। রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন।
Advertisement
শুনানিতে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন করতে হবে। ২৪ থেকে ৪৫তম বিসিএসের পরীক্ষায় আবেদ আলী কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধা নিয়ে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এই তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
আরও পড়ুন প্রশ্নফাঁসে চাকরি পাওয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো, খুঁজে দেবে কে? খলিলের ফাঁস করা প্রশ্নে ৩ বিসিএস ক্যাডার, আতঙ্কে অন্যরাও প্রশ্নফাঁসের ৬ মূল হোতার সম্পদের পাহাড়তখন আদালত বলেন, ‘তালিকা কীভাবে খুঁজে বের করবেন? রিটকারী বলেন, ‘আবেদ আলী ও তার গ্যাংরা এই তালিকার বিষয়টি জানেন।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুজ্জামান জামান বলেন, ‘বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আবেদ আলী অনেকের নামও বলেছেন।’
তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘বেনজীর আহমেদের মতো এতটা পাওয়ারফুল নয় আবেদ আলী। তবে ফাঁসকৃত প্রশ্ন যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে এবং যারা এর পেছনে রয়েছে তারা পাওয়ারফুল। তদন্ত সংস্থা কি তাদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা রাখেন? যদি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নাই থাকে তাহলে সেভাবেই আদেশ দেওয়া হবে।’
Advertisement
হাইকোর্ট বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ দেশের বাইরে চলে গেছেন। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো চ্যানেলে তিনি বাইরে গেছেন। আমরা শুনেছি বিমানবন্দর দিয়ে তিনি দেশের বাইরে গেছেন। বেনজীর আহমেদকে চেনেন না এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নেই, তাহলে তিনি কীভাবে দেশের বাইরে চলে গেলেন?
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি দেশের বাইরে গেছেন কি না সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। হাইকোর্ট বলেন, ‘ব্যাংকে এক লক্ষ টাকার জন্য গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর বেনজীর আহমেদ কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে গেছেন।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘একটা পাবলিক পরীক্ষায় ৫ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৫/২০ হাজার পাস করে। তাদের মধ্য থেকে ২ হাজার মৌখিক পরীক্ষায় যায়। অতএব রিটকারী যে মেধাশুন্যের কথা বলছেন তা ঠিক না।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘প্রশ্ন পেলে পাস করা সহজ হয়ে যায়। এটা কেন মানছেন না। আর যারা দুর্নীতির আশ্রয় নেয় তারা ভাইভা বোর্ডে গিয়েও দুর্নীতি করে।’
শেষে হাইকোর্ট রিটটির এক সপ্তাহ শুনানি মুলতবির আদেশ দেন। এ সময়ের মধ্যে রিটের বিষয়বস্তুর ওপর সরকারের অবস্থান কী, তা রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন আদালত।
এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস