‘তুমি কে, আমি কে- রাজাকার, রাজাকার’- এমন স্লোগান দেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই শিক্ষার্থীকে হলে আটকে রাখার প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
Advertisement
রোববার (১৪ জুলাই) দিনগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন
Advertisement
মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ‘তুমি কে, আমি কে- রাজাকার রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারও বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’, ‘আমার ভাই আটক কেন- জবাব চাই জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
হল সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের হলে এমন স্লোগান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে ৪৯তম ব্যাচের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মো. সাঈফ খান ম্যাসেজ দেন। পরে হলের ১২৪ নম্বর কক্ষ থেকে পুরো হলে সেই স্লোগান ছড়িয়ে পড়ে৷
এসময় শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পলিটিক্যাল ব্লক থেকে ৪৮তম ব্যাচের সিনিয়ররা এসে তাদের সবাইকে ডেকে হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যান।
এরপর শিক্ষার্থীদের কাছে ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। এসময় ‘ছাত্রশিবির সন্দেহে’ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়৷ এরই মধ্যে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদারকে ডেকে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগ নেতারা৷ পরে হল প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ক্ষমা চাইলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
Advertisement
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তারা ভীত। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সবাইকে রাজাকার বলা হয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আহ্বান করেন। শিক্ষার্থীদের হলে আটকে রেখে যারা হেনস্তা করেছে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন
মধ্যরাতে উত্তাল সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়এর আগে, চলমান কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যর প্রতিক্রিয়ায় রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, হলের সামনে শিক্ষার্থীদের মিছিলের কথা শুনে হলে এসেছি৷ তবে ঘটনার বিস্তারিত বুঝতে পারিনি। সম্ভবত কোনো স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে৷ আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।
সৈকত ইসলাম/এমকেআর