আরিফুল ইসলাম তামিম
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিদিনই কোনো না কোনো একাডেমিক ব্যস্ততা লেগেই থাকে। তবে সব ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে কিছুটা আনন্দ খুঁজে পেতে সবাই মিলে ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করি।
সবাই বলতে চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ৩২জন মিলে মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত নাপিত্তাছড়া ঝরনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সবাই মিলে।
যাতায়াত ঝামেলা এড়াতে একটি বাস ঠিক করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় সবাইকে আসতে বললেও কেউ কেউ সময়মতো না আসায় বাস ছাড়তেও দেরি হলো। এরই মধ্যে বাসে সিনিয়র-জুনিয়র সব শিক্ষার্থীর হৈ-হুল্লোড় শুরু। শহরের একেখান মোড় থেকে বাস ছাড়ে সকাল ৯টায়। প্রায় দেড় ঘণ্টার জার্নি শেষে মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারীবাজারে এসে পৌঁছায় আমরা।
Advertisement
এরপর কিছু পথ হেঁটে দেখা মেলে রেললাইন। তার একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দু-চারটি খাবার হোটেল। স্থানীয় একটি দোকানে খাবার অর্ডার দিয়ে ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে রওনা শুরু করি। টিকিট সংগ্রহ শেষে ট্রেইলের যাত্রা শুরু হয়। চারপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। এসবের ভেতর দিয়ে ঝিরিপথ।
ঝিরিপথে পানির কলতান যে কাউকে রোমাঞ্চিত করে তুলবে। চট্টগ্রামে বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে আর এতেই ঝরনাগুলো যেন তার যৌবন ফিরে পেয়েছে। ঝিরিপথ ধরে দলবেঁধে আমরা সবাই হেঁটে যাচ্ছি নাপিত্তাছড়া ঝরনার উদ্দেশ্যে। ঝিরিপথে পানির তেমন স্রোত না থাকলেও বিশাল বিশাল পাথরে পা ফেলে পথ পাড়ি দিতে বড়ই অ্যাডভেঞ্চার।
অনিন্দ্যসুন্দর ঝিরিপথের সৌন্দর্যে ততক্ষণে প্রায় সবাই নিজেকে ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত। কেউ আবার আপন মনে গানের সুরে মেতেছে। সে এক অন্যরকম রোমাঞ্চ। প্রায় ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর ঝরনার ছল ছল পানির শব্দ শুনলাম। এই দৃশ্য দেখার পর সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেল।
আরও পড়ুননেপাল ভ্রমণে যেসব স্থানে ঢুঁ মারতে ভুলবেন নানিকলী হাওরে পর্যটকদের ঢলমিরসরাইয়ে অবস্থিত এই জলপ্রপাতে মোট ৩টি ঝরনা আছে। এর প্রথমটি কুপিকাটাকুম। এর আগের অংশটিকে বলা হয় টিপরাখুম। এর মধ্য দিয়েই ঝরনায় যেতে হয়। মূলত ত্রিপুরা আদিবাসীরা এখানে থাকেন। তাই এর নাম হয় টিপরাখুম। এর উপরে বেয়ে আমরা যাই কুপিকাটাকুম ঝরনায়।
Advertisement
তবে এখানকার পাথর প্রচুর পিচ্ছিল, আর খুমের গভীরতা বেশি থাকায় আমরা ঝুঁকি এড়াতে কেউ নামলাম না সেখানে। কুপিকাটাকুমের পাশেই উঁচু পাহাড় বেয়ে কিছু দূর গিয়ে দেখলাম, একজন লেবুর শরবত বিক্রি করছেন। সবাই লেবুর শরবত পান করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করি।
এরপর আবার বিশাল বিশাল পাথর, ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে হাটতে হাতের ডানে গিয়ে ১০ মিনিট পরেই দেখা মেলে বান্দরখুম জলপ্রপাত। মূলত এটি নাপিত্তাছড়া ঝরনা নামে পরিচিত। পাহাড়ের চূড়া থেকে সাদা জলরাশি আর পানির কলতানে এই ঝরনা সবার প্রিয় হয়ে উঠেছে।
ঝরনায় গা ভেজানোর পাশাপাশি ছবি, ভিডিও ধারণে সবাই ব্যস্ত। এই জলপ্রপাতে আরেকটি ঝরনা আছে, যার নাম বাঘ বিয়ানী ঝরনা। এর শীতল পানি ও পানিপ্রবাহের কল কল ধ্বনিতে যে কেউ বিমোহিত হবে। সেখানে কিছুক্ষণ গা ভেজানোর পর আমরা ট্রেইলে বসে বিশ্রাম নিলাম কিছুক্ষণ। এবার ফেরার পালা। বিকেলের মধ্যেই শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে।
ঝরনা ভ্রমণ শেষে আমরা ফিরে আসি কুপিকাটাকুম ট্রেইলে। সেখানে আমাদের সবার গ্রুপ ছবি ফ্রেমবন্দি করে আবার ঝিরিতে নেমে আসি। এবার ফেরার পালা। ৩ ঝরনা ঘুরে আসতে আসতে এরই মধ্যে বিকেল হয়ে গেছে। প্রায় ৪০ মিনিট ঝিরিপথ ধরে হেঁটে আমরা গ্রামীণ পথ ধরে খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
খাবার খাওয়া শেষে এবার ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে কিছুক্ষণ কাঁচা সড়ক হেঁটে আমরা মূল সড়কে আগে থেকে ঠিক করা গাড়িতে চড়ে শহরে ফিরে আসি। মিরসরাইয়ের জনপ্রিয় এই ট্রেইল ভ্রমণে সর্তক থাকা উচিত।
সময় নিয়ে ঝিরিপথ অতিক্রম না করলে বিপদ ঘটতে পারে। এই ট্রেইলে ট্রেকিং স্যান্ডেল নিলে অনেকটাই সুবিধা পাওয়া যায়। বর্ষা থাকতেই নাপিত্তাছড়া ঝরনার মায়াবি রূপ দেখতে হলে একবার হলেও সবার ছুটে যাওয়া উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ (পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম)
জেএমএস/জেআইএম