সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ জুলাই) পেনসিলভানিয়ার বাটলারে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। তবে এতে আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি।
Advertisement
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের হত্যা বা হত্যাচেষ্টার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমন বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। আসুন এক নজরে ১৭৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটিতে ঘটে যাওয়া কিছু হত্যাকাণ্ড ও হত্যাচেষ্টার ঘটনাগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
আব্রাহাম লিংকন, ১৬তম প্রেসিডেন্ট
আব্রাহাম লিংকন ছিলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসির ফোর্ডস থিয়েটারে ‘আওয়ার আমেরিকান কাজিন’ নাটকে অংশ নেওয়ার সময় জন উইলকস বোথ নামে এক ব্যক্তি তাকে গুলি করেন।
Advertisement
আরও পড়ুন:
এখন কেমন আছেন ট্রাম্প? ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে: এফবিআই যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা নেই: বাইডেন গুলিতে ডান কান ফুটো হয়ে গেছে, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ট্রাম্পমাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর লিংকনকে চিকিৎসার জন্য থিয়েটার থেকে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালেই তিনি মারা যান।
বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারের প্রতি লিংকনের সমর্থন থাকার ফলেই, তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
জেমস গারফিল্ড, ২০তম প্রেসিডেন্ট
Advertisement
গারফিল্ড হলেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কার্যভার নেওয়ার ছয় মাসের মাথায় তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
জানা গেছে, ১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন থেকে নিউ ইংল্যান্ডে যাওয়া জন্য ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সেসময় চার্লস গুইটো নামক এক আতাতায়ী তাকে গুলি করেন। কয়েক সপ্তাহ হোয়াইট হাউজে চিকিৎসা নেওয়ার পর সেপ্টেম্বরে নিউ জার্সিতে নিয়ে গেলে গারফিল্ড মারা যান।
গারফিল্ডের স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার আর্থার। আর চার্লস গুইটো দোষী সাব্যস্ত করা হন ও ১৮৮২ সালের জুনে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
উইলিয়াম ম্যাককিনলে, ২৫তম প্রেসিডেন্ট
ম্যাককিনলি ১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বাফেলোতে বক্তব্য দেওয়ার পরে গুলিবিদ্ধ হন। বক্তব্য শেষে তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে করমর্দন করছিলেন। সেসময় লিয়ন এফ. সলগোস নামক এক ব্যক্তি তার বুকে গুলি চালান।
চিকিৎসকরা আশা করেছিলেন, ম্যাককিনলি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু গুলির ক্ষতগুলোর চারপাশে গ্যাংগ্রিন তৈরি হয়। ম্যাককিনলি তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার ছয় মাস পর ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান।
ম্যাককিনলির স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট। আর ২৮ বছর বয়সী হামলাকারী সলগোস বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন ও ১৯০১ সালের ২৯ অক্টোবর বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে তার শাস্তি কার্যকর করা হয়।
জন এফ. কেনেডি, ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট
কেনেডিকে ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডালাস শহরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সেসময় তিনি মোটর শোভাযাত্রা করতে করতে দশর্কদের ভিড়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই কেনেডির ঘাড় ও মাথার পেছনে গুলি করা হয়।
সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ৪৬ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্টকে পার্কল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পরেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।\
প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ড ছিল গত শতকের সবচাইতে নাটকীয় এবং চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এই ঘটনা। এর কারণও আছে। প্রেসিডেন্ট কেনেডি ছিলেন গড়পড়তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক আলাদা। সুদর্শন এই প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রী জ্যাকি হোয়াইট হাউজে আলাদা গ্ল্যামার যোগ করেছিলেন।
বেঁচে গেছেন যারা
থিওডোর রুজভেল্ট, ২৬তম প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। ১৯১২ সালে নির্বাচনী প্রচারণাকালে তাকে গুলি করা হয়। এক সেলুনের কর্মী তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন।
জানা যায়, রুজভেল্টের পকেটে ভাঁজ করে রাখা ৫০ পৃষ্ঠার বক্তব্যের অনুলিপি ও ধাতব চশমার কেস গুলির গতি কমিয়ে দেওয়ায় গুরুতরভাবে আহত হননি তিনি। হামলার পরও সমাবেশে বক্তব্য দেন রুজভেল্ট।
ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, ৩২তম প্রেসিডেন্ট
১৯৩৩ সালে মিয়ামিতে গুলি করা হয় মার্কিন এই প্রেসিডেন্টকে। বন্দুকধারী গুইসেপ্পে জাঙ্গারা রুজভেল্টকে হত্যা করতে না পারলেও শিকাগোর মেয়র আন্তন সেরমাককে মেরে ফেলেন।
হ্যারি ট্রুম্যান, ৩৩তম প্রেসিডেন্ট
রুজভেল্টের মৃত্যুর পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন হ্যারি ট্রুম্যান। ১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসে তার ওপর বন্দুক হামলা চালান পুয়ের্তো রিকান এক জাতীয়তাবাদী।
আরও পড়ুন:
হামলার ঘটনায় বাইডেনকেই দায়ী করছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা হামলায় আহত ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রাম্পের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে মেটাজেরাল্ড ফোর্ড, ৩৮তম প্রেসিডেন্ট
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৫ সালের দুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। এরমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে হামলার আগেই একবার তা রুখে দেওয়া হয়। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর সান ফ্রান্সিসকোতেও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে সেবার এক পথচারীর কারণে তিনি বেঁচে যান।
রোনাল্ড রেগান, ৪০তম প্রেসিডেন্ট
১৯৮১ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে হিলটনের বাইরে একটি বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাকে গুলি করা হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি জেমস ব্র্যাডি রেগানের চেয়ে গুরুতরভাবে আহত হন। পরে এই ব্যক্তি আমেরিকায় বন্দুক নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
জর্জ ডব্লিউ বুশ, ৪৩তম প্রেসিডেন্ট
বুশ ২০০৫ সালে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলির সঙ্গে তিবিলিসিতে একটি সমাবেশে যোগদান করছিলেন। সেসময় তাকে লক্ষ্য করে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ওই ঘটনায় ভ্লাদিমির আরুটিউনিয়ান নামক এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ও তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
বারাক ওবামা, ৪৪তম প্রেসিডেন্ট সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও হত্যাচেষ্টা করা হয়। ২০১১ সালে হোয়াইট হাউজে তিনি হত্যাচেষ্টার শিকার হন।
সূত্র: এপি
এসএএইচ