ফরিদপুরে গত কয়েক বছর পাট চাষে লাভের মুখ দেখলেও এবার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। কারণ সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় গাছের বৃদ্ধি কমে গেছে।
Advertisement
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় দুই জাতের (তোস এবং মাস্তে) পাটের আবাদ হয়েছে। এবছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯শ টন।
লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম পাটের আবাদ হয়েছে এবার। তারপর বৃষ্টি কম হওয়া, পাটের পাতা পোড়া রোগ ও পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা ভোগাচ্ছে চাষিদের। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, সামনের কয়েক দিন আরও বৃষ্টি হবে, তখন এ সমস্যা কেটে যাবে।
নগরকান্দা উপজেলার পাটচাষি কুদ্দুস মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, এবার চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। চাষের প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়। জমিতে সেচ দিয়ে পাটবীজ বপন করতে হয়েছে। শুরু থেকেই রোদ আর অনাবৃষ্টির কারণে খরচ বেড়েছে। এখন খরচের টাকা ওঠানোই কষ্টসাধ্য। তবে পাটের দাম বেশি পেলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠবে।
Advertisement
একই উপজেলার আরেক কৃষক শেখ এনায়েত শেখ জাগো নিউজকে বলেন, জমির পাট পরিপক্ব হয়েছে। কিন্তু খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। কীভাবে জাগ দেবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এবার এক একর জমিতে পাট আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার মতো। অন্যবার পাট উৎপাদন হয় একর প্রতি ২০-২৫ মণ। কিন্তু এবার উৎপাদন হতে পারে ১৫ মণের মতো। এরপর কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও সার-কীটনাশকের দাম বাড়ায় খরচও বেশি হয়েছে। ফলন ভালো না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
সালথা উপজেলার পাটচাষি মজিদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এবার প্রথম দিকে প্রখর খরা ছিল। পাট আবাদের শুরু থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছি। গত বছরের থেকে এবার বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এখন আবার নতুন সমস্যা পাট জাগ দেওয়া। সব খরচ বিবেচনা করে সরকার যেন উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করে।
বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের তেলজুড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এবার দেড় একর জমিতে পাট চাষ করেছি। তাতে লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন তেমন ভালো হয়নি। পাটকাটার শ্রমিক সংকট। আশপাশে নদীনালা, খাল-বিল, পুকুরেও তেমন পানি নেই। কীভাবে যে পাট জাগ দিয়ে ফসল ঘরে তুলবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন সিকদার বলেন, জেলার মধ্যে সালথায় পাটের বেশি আবাদ হয়। এবছর উপজেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। প্রচণ্ড খরার কারণে জমিতে বাড়তি সেচ দিতে হয়েছে। পাট উৎপাদনে এবার যে খরচ তাতে ন্যায্যমূল্য পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
Advertisement
এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা মূলত বৃষ্টির ওপরে নির্ভর করেই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এবছর প্রায় ৩০ দিন টানা বৃষ্টিহীন ছিল জেলা। তীব্র গরমও ছিল। এ কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দিতে হয়েছে। যারা সেচ দিয়ে চাষ করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাটকাটা এখনো পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় ফলন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাটচাষিরা এটা ঠিক। তবে দাম ভালো পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন পাট চাষিরা।
এন কে বি নয়ন/জেডএইচ/জেআইএম