দেশজুড়ে

‘চিটার’ হিসেবে পরিচিত প্রিয়নাথ, খোঁজ নেন না মায়ের

বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রিয়নাথ রায়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত প্রিয়নাথের দিনাজপুর ও ঢাকায় বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পত্তি রয়েছে।

Advertisement

তবে ‘চিটার’ হিসেবে পরিচিত প্রিয়নাথের নিজ এলাকায় তেমন কোনো সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করেন প্রিয়নাথের বৃদ্ধা মা। তবে প্রিয়নাথ মায়ের কোনো খোঁজখবর নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের রাইতু রায় ও রাজবালা দম্পতির সন্তান প্রিয়নাথ রায়। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা প্রিয়নাথ এসএসসি পরীক্ষার সময় হারান বাবাকে। এইচএসসির পর বনবিভাগে চাকরি নেন। ডিগ্রি পাস করে যোগ দেন অডিটর পদে। একটা সময় জড়িয়ে পড়েন চাকরির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিলেন প্রিয়নাথ। জড়িয়েছেন মামলায়ও। মামলার পর থেকে তাকে গ্রামে আসতে দেখেননি এলাকাবাসী।

আরও পড়ুন

Advertisement

পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার ১৭ জনের পরিচয় যা জানা গেলো পিএসসির প্রশ্নফাঁস: আবেদ আলীসহ গ্রেফতার ১৭ গাড়িচালক আবেদের অঢেল সম্পদ, দামি গাড়িতে চড়েন ছেলে পিএসসিকে বিতর্কিত করা হলে চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে

স্থানীয়রা জানান, পরীক্ষার আগেই প্রায় ৪৫০ জনকে প্রশ্নপত্র দিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করা এই প্রিয়নাথ আগেও বিভিন্ন চাকরি পাইয়ে দিতে টাকার লেনদেন করতেন। চাকরি দেওয়ার শর্তে একেকজনের সঙ্গে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। এসব করতে গিয়ে অনেকের কাছে টাকা নিয়ে চাকরি দিতে পরেননি। এসব বিষয়ে ৫ বছর আগে তার নামে মামলাও হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আর ঠাকুরগাঁওয়ে আসেনি। নেননি মায়ের খোঁজখবর।

ঠাকুরগাঁওয়ে এই বাড়িতে একা থাকেন প্রিয়নাথের মা

গ্রামের বাড়িতে একা থাকেন প্রিয়নাথের মা রাজবালা। অপকর্মে ছেলের জড়িয়ে পড়ার জন্য পুত্রবধূকে দায়ী করেন রাজবালা। তবে দোষী হলেও ছেলের মুক্তি চান তিনি।

প্রিয়নাথের মা রাজবালা বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে আমি ছেলের মুখ দেখিনি। জানি না ছেলে কী করে, কোথায় থাকে। এতকিছু শোনার পরে এখন ভয় হয় ছেলের মুখ আর দেখতে পারবো কি না। মৃত্যুর আগে একটাবার ছেলের মুখখানি দেখতে চাই।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব বলেন, প্রিয়নাথের মা ছাড়া পরিবারের সবাই ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে থাকে। এখানে ওর মা ছাড়া কেউ থাকে না। শুধু শুনেছি চাকরি দেওয়ার নামে সে টাকা নিতো। পুলিশও এসেছে অনেকবার। কিন্তু সে অনেকদিন ধরে বাড়িতে আসেনি। এখন দেখছি এমন কর্মকাণ্ড।

আরেক প্রতিবেশী শামসুজ্জোহা জানান, এলাকার সবাই প্রিয়নাথকে চিটার-বাটপার হিসেবেই জানে। তবে সে যে এতবড় কাণ্ডের সঙ্গে জড়াতে পারে তা আমরা কেউ ভাবতে পারিনি।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় প্রিয়নাথের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তিনি বাড়িতে আসেন না।

তানভীর হাসান তানু/ইএ