ব্যবসায় মুনাফার মাধ্যমে কোম্পানি ভ্যালুয়েশন বাড়িয়ে একক মালিকানা থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ার পথে হাঁটছে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি।
Advertisement
একই সঙ্গে বিশ্বের ১০টি দেশে বাংলাদেশে তৈরি পণ্য বিক্রি শুরুর জন্য ক্রসবর্ডার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম উন্মোচন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী মাসে অর্থাৎ আগস্টে ‘সভলোন’ নামে প্ল্যাটফর্ম চালু করতে চায় ইভ্যালি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব পরিকল্পনার কথা জানান ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল।
লোভনীয় দুটি প্রজেক্টের কথা তুলে ধরে রাসেল বলেন, আমরা নতুন দুটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। একটি হলো ‘বিসেলার’, যা বিভিন্ন দেশে যুক্ত হয়ে কাজ করবে। তরুণরা সেখানে খণ্ডকালীন কাজ করতে পারবেন। এটা মূলত পণ্য বিক্রির সাইট হবে।
Advertisement
ইভ্যালির প্রধান বলেন, আরেকটা প্রজেক্টের নাম ‘সভলোন’, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পণ্য সরবরাহ করা হবে। আমরা সরাসরি ডলার আয় করবো। আগস্ট থেকে এটা শুরু করতে চাই। এ প্রজেক্ট যদি শুরু হয়, তাহলে খুব ভালো চলবে বলে আমার বিশ্বাস। অন্তত ১০টি দেশে আপাতত শুরু করবো।
৬ মাসে পরিশোধ ২ কোটি ১৭ লাখ, দেনা ৫০০ কোটি
গত ছয় মাসে ইভ্যালি ব্যবসার নিট মুনাফা থেকে পাওনাদারদের দুই কোটি ১৭ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে বলেও জানান রাসেল। তার দেওয়া তথ্যমতে, পাওনা পরিশোধের পর এখনো তাদের দেনা রয়েছে ৫০০ কোটি টাকার মতো।
রাসেল বলেন, আমরা হিসাব কষে দেখেছি, ই-ভ্যালির ফিন্যান্সিয়াল ভ্যালু ৫০ কোটি টাকার মতো। একক মালিকানায় বিনিয়োগ পেতে ব্যর্থতা ঘোচাতে ইভ্যালি শেয়ারবাজার থেকেও বিনিয়োগ আহরণ করতে পারবে। ই-ভ্যালির যে অ্যাসেট ভ্যালু রয়েছে, তা আশার বিষয়। বাজার থেকে দুই-আড়াইশ কোটি টাকা আহরণ সম্ভব। কেননা ইভ্যালি প্রফিটেবল, অ্যাফোর্ডেবল তা প্রমাণ করা যাচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
ই-কমার্স নিয়ে এখনো অভিযোগের পাহাড়, বেশি ইভ্যালির বিরুদ্ধে আপস শর্তে খালাস পেলেন ইভ্যালির রাসেল-শামীমাদুই বছরের মধ্যে দেনা পরিশোধের কথা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ৬ মাসের নিট লাভ থেকে বিষয়টি অনুমান করা সম্ভব। আশা করি, ২০২৪ সালে আমরা একটি ব্রেক থ্রু করবো। আগামী দুই মাস গ্রাহকদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে মিডিয়া ও সেলারদের বকেয়া পরিশোধ করবো। আগামী দুই বছরের মধ্যেই সব দেনা পরিশোধ করতে পারবো।
‘আমি আত্মগোপনে নেই, পালিয়ে বেড়াচ্ছি না’
সাংবাদিকরা তার আত্মগোপনে থাকা এবং ফিজিক্যাল অফিস করা নিয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তরে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমি আত্মগোপনে নেই, পালিয়েও বেড়াচ্ছি না। এ কথা শুনলে আমার হাসি পায়। আর সরকারের মনিটরিংয়েও আমি উপকৃত হচ্ছি। অবশ্য পাওয়ার খাটিয়ে কেউ যদি বকেয়া আদায় করতে আসেন, তাহলে আমি ভেঙে পড়বো। আশা করছি, আগামী মাসে টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হলে ফিজিক্যাল অফিস করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরুর পর গাড়ি, মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনের মতো পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাড়া ফেলে অনলাইন মার্কেট প্লেস ইভ্যালি।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির চটকদার অফারের ‘প্রলোভনে’ অনেকেই বিপুল অংকের টাকা অগ্রিম দিয়ে পণ্যের অর্ডার করেছিলেন পরে বেশি দামে বিক্রি করে ভালো লাভ করার আশায়। তবে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও তাদের অনেকে পণ্য বুঝে পাননি; ইভ্যালি অগ্রিম হিসেবে নেওয়া টাকাও ফেরত দেয়নি।
একপর্যায়ে ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়ে ইভ্যালি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইভ্যালিসহ আরও বেশ কিছু ই-কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভে নামেন গ্রাহকরা। সেই থেকে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়।
মামলার বোঝা নিয়ে জেল খেটেছেন রাসেল ও ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল শামীমা এবং ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাসেল জামিনে কারামুক্ত হন। তারা আবার ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু করেন।
এএএইচ/ইএ