এইচএসসিতে দেশের সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোতে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্রে দুটি জায়গায় ভুল ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একটি প্রশ্নের ভুল আবার এমন যে, তা মেলানো কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব নয়।
Advertisement
শিক্ষকরা জানান, প্রশ্নটি সংশোধন না করায় উত্তর মেলাতে না পেরে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা ৮ নম্বর কম পাবেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে সবাইকে এ প্রশ্নে নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। তা না হলে এইচএসসি পাস করার পর বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা হারাবেন ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা।
বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের দুটি প্রশ্নই সংগ্রহ করেছেন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। দুই ভার্সনের প্রশ্নপত্র যাচাই করে ভুল ও অসংগতির সত্যতাও পাওয়া গেছে।
দুটি প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলা ভার্সনের ৪ নম্বর প্রশ্নের ‘উদ্দীপক’-এ বলা হয়েছে, ‘বান্দরবানের পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে সুমন 200kg ভরের একটি গাড়ি 60kmh (-1) বেগে চালাচ্ছে। রাস্তার বাঁকের ব্যাসার্ধ 150m। ঐ স্থানে রাস্তাটি 4m চওড়া এবং ভিতরের কিনারা থেকে বাইরের কিনারা 0.5m উঁচু।’
Advertisement
অন্যদিকে ইংরেজি ভার্সনে একই প্রশ্নে ‘উদ্দীপক’-এ বলা হয়েছে, Suman is driving a car of mass 200kg at a speed of 60 kmh (-1) at a bend in the hilly road of Bandarban. The radius of the road bend is 150m. At that point the road is 4m wide and 5m high from the inner edge to the outer edge.
অর্থাৎ, বাংলা ভার্সনে ‘শূন্য দশমিক ৫ মিটার উঁচু’বলা হলেও ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নে সরসারি ‘৫ মিটার উঁচু’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা একেবারেই অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকরা।
পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের একাধিক শিক্ষক ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নটি স্পষ্ট ভুল বলে উল্লেখ করেন। তারা জাগো নিউজকে জানান, বাংলা ভার্সনের প্রশ্নটি ঠিক আছে। সেখানে ‘শূন্য দশমিক ৫ মিটার’ উল্লেখ করা হয়েছে। এটার উত্তর মিলবে। কিন্তু ইংরেজি ভার্সনে একই প্রশ্নে সরাসরি ‘৫ মিটার’ বলা হয়েছে। এটা দিয়ে উত্তর মেলানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন
Advertisement
তাদের দাবি, ঢাকা বোর্ড যদি প্রশ্নটি সংশোধন কিংবা সবাইকে নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা না করে, তাহলে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা ৮ মার্কসে পিছিয়ে পড়বে। এটা তাদের উচ্চশিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে। অনেকে বুয়েটের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হারাবে।
প্রশ্নপত্রে আরও ‘অসংগতি’
ঢাকা বোর্ডের পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রের আরেকটি প্রশ্নেও অসংগতি পাওয়া গেছে। সৃজনশীল প্রশ্নের ৭-এর ‘ঘ’-তে বাংলা ভার্সনের প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ‘কোন দোলকের শক্তি বেশি’। অথচ ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নে লেখা হয়েছে, ‘Which pendulum is more powerful’।
এ প্রশ্নটির ব্যাপারে শিক্ষকরা জানান, বাংলায় বলা হচ্ছে ‘শক্তি’। আর ইংরেজিতে বলা হচ্ছে ‘পাওয়ারফুল’, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘ক্ষমতাশালী’। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় ‘শক্তি’ও ‘পাওয়ার’এক জিনিস নয়। ফলে এ প্রশ্নটাও অসংগতিপূর্ণ।
রাজধানীর একটি সরকারি হাইস্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, দুটি প্রশ্নের মধ্যে একটা স্পষ্ট ভুল। আরেকটিতে অসঙ্গতি। পাবলিক পরীক্ষায় যেখানে প্রশ্ন তৈরির পর একাধিকবার মডারেশনের কাজ করা হয়, সেখানে এমন ভুল কাম্য নয়।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ‘কথা বলার বিষয় ও পরিচয়’ উল্লেখ করে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এএএইচ/ইএ