বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর নড়েচড়ে বসেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত অবস্থায় কারা কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করতে শুরু হয়েছে তোড়জোড়।
Advertisement
ঢাকা ও বাইরের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত চারজনকে কোচিং ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার (১০ ও ১১ জুলাই) তাদের এ নোটিশ দেওয়া হয়। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পিএসসির প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে শোকজ নোটিশ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এদিকে, একজন কর্মচারীকে দেওয়া শোকজ নোটিশের একটি কপি জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ওই কর্মচারীর নাম মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত।
Advertisement
বুধবার (১০ জুলাই) পিএসসির সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রশাসন-১) জামিলা শবনমের সই করা নোটিশে বলা হয়েছে, নির্দেশক্রমে অবহিত করা যাচ্ছে যে, আপনি মো. মনিরুল ইসলাম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়, কোচিং ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত আছেন মর্মে জানা গেছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ১৭ বিধিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে সরকারি কার্যব্যতীত অন্য কোনো ব্যবসায়ে জড়িত হতে অথবা অন্য কোনো চাকরি বা কার্যগ্রহণ করতে পারবেন না।’
আরও পড়ুনপ্রশ্নফাঁস নিয়ে পিএসসির আইনে প্রথম মামলা, হতে পারে যে সাজাযেভাবে ফাঁস হতো পিএসসির প্রশ্নএতে আরও বলা হয়, আপনি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোচিং ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন, যা দাপ্তরিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। আপনার এরূপ আচরণের জন্য বিধি অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে চিঠি প্রাপ্তির সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হলো।
নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী সচিব জামিলা শবনম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চারজনকে শোকজ করা হয়েছে, এটা সত্য। তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় আমি দিতে পারবো না। এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের জনসংযোগ দপ্তর কিংবা চেয়ারম্যান এটা দিতে পারবেন।’
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলেও পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান এবং চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Advertisement
গত ৭ জুলাই রাতে পিএসসির অধীনে রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন প্রচার করে বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর। পরদিন ৮ জুলাই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে ব্যাখ্যা দেয় পিএসসি। সেখানে প্রশ্নফাঁস অসম্ভব বলে দাবি করে। যদিও ওই ব্যাখ্যার শেষদিকে উল্লেখ করা হয়, ‘তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
একই দিন রাতে পিএসসি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটিতে প্রধান করা হয় পিএসসির যুগ্মসচিব ড. আব্দুল আলীম খানকে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হককে এবং একমাত্র সদস্য হিসেবে রাখা হয় আরেক পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানাকে।
পরদিন (৯ জুলাই) প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার মামলায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে পিএসসি। এছাড়া তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগও করে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
এএএইচ/এমএইচআর/জেআইএম