পশ্চিমবঙ্গে এক বাংলাদেশি তরুণের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, বুধবার (১০ জুলাই) কলকাতার বরুণ সেনগুপ্ত মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি জলাশয় থেকে ওই তরুণের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
সঙ্গে থাকা নথিপত্র দেখে পুলিশ জানতে পারে, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। তার নাম দাউদ হোসেন উপল, বয়স ২৩ বছর। উপল ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন।
এদিকে, কলকাতায় বাংলাদেশি এ তরুণের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
জানা গেছে, কলকাতার নিউমার্কেটের মারক্যুইস স্ট্রিট সংলগ্ন কাওয়াই স্ট্রিট লেনের আফ্রিদি ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে চার বন্ধুর সঙ্গে উঠে ছিলেন উপল। তারা বন্ধুরা হলেন রাশিদ মোবারক, সোহেল আল আফনান এবং ফিরদৌস হোসেন।
হোটেলের ম্যানেজার আতিক হোসেনের কাছে উপল জানিয়েছিলেন, তারা চার বন্ধু কলকাতায় ঘুরতে এসেছেন। আফ্রিদি ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের ৪০২ এবং ৪০৪ রুমে উঠেছিলেন তারা। এর মধ্যে উপল থাকছিলেন ৪০৪ নম্বর রুমে।
হোটেলটির ম্যানেজার জানিয়েছেন, চারজন একসঙ্গে রুম নিলেও কেউ একই দিনে হোটেল ছাড়েননি। তারা ধাপে ধাপে হোটেল ছেড়েছিলেন।
আতিক আরও জানান, বাকি তিন বন্ধুর মধ্যে কে উপলের সঙ্গে রুম শেয়ার করেছিলেন, তা ঠিক বলতে পারবো না। তবে এই চারজনের ব্যবহার অস্বাভাবিক মনে হয়নি।
Advertisement
গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) উপল হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, ওইদিন দুপুরে তার দেশে ফেরার ফ্লাইট রয়েছে। তাই সেদিন রুম ছেড়ে দেবেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ ট্যাক্সিতে চড়ে লাগেজসহ হোটেল থেকে বেরিয়ে যান উপল।
এরপর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার কলকাতার সায়েন্স সিটির কাছে একটি জলাশয় থেকে তরুণের মরদেহ উদ্ধার করে প্রগতি ময়দান থানা পুলিশ।
আরও পড়ুন>>
বাংলাদেশ থেকে ভারতে ১০ কেজি সোনা পাচারের চেষ্টা, আটক ৭ বাংলাদেশিদের ই-মেডিকেল ভিসা দেওয়ায় লাভবান হবে পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতালের জানালা ভেঙে পালালেন বাংলাদেশি আসামিদাউদ হোসেন উপলের পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তার বাড়ি ঢাকার মোহাম্মদপুরের মসজিদ গলির রোডে।
তবে উপল হোটেল থেকে বেরিয়ে ঠিক কী কারণে সায়েন্স সিটির ওই জলাশয়ের কাছে গিয়েছিলেন, তা পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। কেন তারা ঢাকা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন এবং কেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে বেড়াতে আসার কথা বলেছিলেন সেটিও নিশ্চিত নয়। এর পেছনে না অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি না তা তদন্তের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
এছাড়াও, রাশিদ মুবারক হোটেলে ছাড়েন ৫ জুলাই, মোহাম্মদ সোহেল আফনান এবং ফিরদৌস হোসেন হোটেল ছাড়েন ৮ জুলাই এবং উপল হোটেল ছাড়েন ৯ জুলাই। কেন তারা একসঙ্গে হোটেল ছাড়লেন না। এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ।
এরই মধ্যে তার দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে কলকাতা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসতে পারে। তখন জানা যাবে উপল আত্মহত্যা করেছেন না তাকে হত্যা করা হয়েছে। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটিও পরিষ্কার হবে।
কলকাতায় এসে বাংলাদেশিদের নিখোঁজ হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের। গত ১৩ মে কলকাতা এসে খুন হন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার।
তারপরে কলকাতায় এসে নিখোঁজ হয়েছিলেন আরও দুই যুবক। এদের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেলেও আরেকজনের খোঁজ এখনো মেলেনি।
ডিডি/কেএএ/