জাকাত ইসলামের ফরজ বিধান, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক ও সম্পদশালী মুসলমান পুরুষ ও নারীর প্রতি বছর নিজের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে জাকাত বলা হয়। শরিয়ত নির্ধারিত সীমার বেশি সম্পদ হিজরি ১ বছর ধরে কারো কাছে থাকলে তাকে সম্পদশালী গণ্য করা হয় এবং তার বর্ধনশীল সম্পদের ২.৫ শতাংশ বা ১/৪০ অংশ দান করতে হয়। কোরআনে জাকাত শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার, নামাজের পর জাকাতের কথাই সবচেয়ে বেশি বলা হয়েছে।
Advertisement
১. স্বর্ণ
২ রৌপ্য
৩. ব্যবসায়িক পণ্য
Advertisement
৪. নগদ অর্থ
স্বর্ণ ও রৌপ্য ছাড়া অন্যান্য মূল্যবান ধাতু যেমন হীরা, মুক্তা, প্লাটিনাম যদি ব্যবসার পণ্য না হয়, তাহলে সেগুলোর জাকাত দিতে হয় না। তাবেঈ ইবরাহিম নাখঈ (রহ.) বলেন,
لَيْسَ فِي الْجَوْهَرِ وَاللُّؤْلُؤِ زَكَاةٌ إِذَا لَمْ يَكُنْ لِلتِّجَارَةِ.
মণি-মুক্তা ব্যবসার পণ্য না হলে, তাতে জাকাত নেই। (কিতাবুল আসার: ২৯৯)
Advertisement
তাই হীরার অলংকারের জাকাত দিতে হবে না। তবে কেউ হীরা বা অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর ব্যবসা করলে এবং তার কাছে ব্যবসার পণ্য হিসেবে এ সব ধাতু থাকলে অন্যান্য ব্যবসার পণ্যের মতো এগুলোরও জাকাত দিতে হবে।
জাকাতের হিসাব যেভাবে করতে হয়
কেউ যদি এক বছর ধরে নেসাব পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পত্তি অর্থাৎ ৭ তোলা বা ৮৭.৪৫ গ্রাম বা এর বেশি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা বা ৬১২.৩৫ গ্রাম রৌপ্যের মালিক থাকে অথবা ৮৭.৪৫ গ্রাম বা এর বেশি স্বর্ণের মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ তার কাছে থাকে, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে সে সম্পদশালী ব্যক্তি গণ্য হবে এবং তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। নগদ অর্থ, স্বর্ণ/ রৌপ্য বা ব্যবসায়ের সম্পদ যেদিন নেসাব পর্যায়ে পৌঁছাবে, সেদিন থেকেই জাকাতের বর্ষগণনা শুরু হবে। জাকাতের বর্ষ পূর্ণ হওয়ার দিনে ওই ব্যক্তির মালিকানায় যে পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পদ অর্থাৎ নগদ অর্থ, ব্যবসায়ের সম্পদ, স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকবে, তার ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ জাকাত হিসেবে দান করে দিতে হবে।
কেউ এক বছর ধরে নেসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক থাকলে নিজের মালিকানাধীন সমুদয় বর্ধনশীল সম্পদের জাকাত দিতে হবে; শুধু যে সম্পদ এক বছর ধরে তার কাছে রয়েছে ওই সম্পদের নয়। সে বছরের শেষে বা মাঝামাঝি সময়ে কিছু অর্থ বা স্বর্ণ লাভ করে থাকলে তাও জাকাতের হিসেবে যুক্ত হবে।
হিজরি ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রতি বছর একবার জাকাতের হিসাব করতে হয়। আমাদের দেশে অনেকে রমজান মাসে জাকাতের হিসাব করে থাকেন। জাকাতের হিসাব করার পর সাথে সাথে পুরো অর্থ আদায় করা জরুরি নয়, বরং ওই অর্থ সারা বছরই অল্প অল্প করে আদায় করা যায়।
ওএফএফ/জিকেএস