সোশ্যাল মিডিয়া

আল মাহমুদ এক জাজ্বল্যমান ইতিহাস

আম্মা বলেন, পড়রে সোনাআব্বা বলেন, মন দে;পাঠে আমার মন বসে নাকাঁঠালচাঁপার গন্ধে...কেউ কি আর কখনো এমন করে লিখতে পারবে? কংক্রিটের মেঝেতে পড়া মার্বেলের টুং শব্দের মতন করে শব্দ তুলে দিতে পারবে শৈশবের বুকের ভেতর?

Advertisement

আমার কেবল ইচ্ছে জাগেনদীর কাছে থাকতে,বকুল ডালে লুকিয়ে থেকেপাখির মতো ডাকতে।একটা ঘুম ভাঙা ভোরের বুক চিড়ে হঠাৎ কি কেউ এমন করে রিনিরিনে গান হয়ে উঠতে পারবে?

সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েকর্ণফুলীর কূলটায়,দুধভরা ঐ চাঁদের বাটিফেরেস্তারা উল্টায়।‘দুধভরা ওই চাঁদের বাটি!!’ এমন করে কি কেউ চোখের ভেতর, বুকের ভেতর গেঁথে দিতে পারবে আশ্চর্য অপার্থিব এক দৃশ্যকল্প, কল্পনার ছবি!

তোমরা যখন শিখছো পড়ামানুষ হওয়ার জন্য,আমি না হয় পাখিই হবো,পাখির মতো বন্য।এমন বুনো, বেপরোয়া কিন্তু সত্যিকারের স্বপ্নের কথা কে বলবে আর?

Advertisement

আরও পড়ুন জেফারের স্পাইসি গান এবং রুচির বিকার  টিকটকার প্রিন্স মামুনের পক্ষে তসলিমা নাসরিন 

কে করবে আর এমন সত্য উচ্চারণ—আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষেহেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে?হাত দিও না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চোয়ালে কে করবেন আর এমন সাহসী উচ্চারণ?

এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পাআমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।আল মাহমুদ, যতটুকু যা পড়েছি, তা কেবল রেখেছি নিজের অনুভব আর বোঝাবুঝি শাণিত করতেই, কাউকে বোঝাতে নয়। কিন্তু আজ যখন পানকৌড়ির রক্তের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে জলবেশ্যার কথা কিংবা কাবিলের বোন। মনে পড়ে সোনালি কাবিন—সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিনীযদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি,আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনিআহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;ভালোবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্বন,ছলনা জানিনা বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি;দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধনআমার তো নেই সখি, যেই পণ্যে অলঙ্কার কিনি।বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরলপৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না;তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফলজ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হব চিরচেনাপরাজিত নই নারী, পরাজিত হয়না কবিরা;দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা।

আল মাহমুদ, এই অনুভবটুকু আছে, ছিলো, থাকবে... আপনি রয়ে গেছেন, রয়ে যাবেন সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হয়েই। যত অবহেলা আর উপেক্ষা আপনাকে আড়াল করতে চেয়েছে, তারচেয়ে অধিক আলো ছড়িয়ে আপনি ঘোষণা করে গেছেন আপনশক্তি। ইতিহাস আপনার। আপনারই। কিংবা বাংলা সাহিত্যে আপনি নিজেই এক জাজ্বল্যমান ইতিহাস। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা।

এসইউ/জিকেএস

Advertisement