জাতীয়

স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি ও সাবরিনাসহ ৭ জনের নামে দুদকের মামলা

করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনসহ সাতজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Advertisement

অন্য আসামিরা হলেন- জেকেজি হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল চৌধুরী ও স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেসা রিমা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আ স ম সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু ও তানজিনা পাটোয়ারীকে আসামি করা হয়েছে।

বুধবার (১০ জুলাই) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। মামলায় আসামিদের নামে দণ্ডবিধির ১৬৮/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। ওই বছরের ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

সেই সময় নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়েছে- এমন অভিযোগে কামাল হোসেন নামে একজন ব্যক্তি তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল। জালিয়াতির এ ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন তৈরি করে। ওই বছরের ১২ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও জেকেজি চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। এরপর সাবরিনার অবৈধ সম্পদ ও এনআইডি জালিয়াতির বিষয়ও সামনে আসে।

আজকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউডের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশ্য এবং কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে জেকেজি হেলথকেয়ার নামক একটি লাভজনক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অন্যদের যোগসাজশে অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন, ট্রেডলাইসেন্সবিহীন তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর ওভাল গ্রুপের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ারকে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমতি পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন।

এজাহারে জানানো হয়, বিনামূল্যে বুথ থেকে করোনার স্যাম্পল কালেকশনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে বুথ থেকে স্যাম্পল কালেকশন না করে সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুলের নির্দেশে তার অফিসের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টেস্ট ফি হিসেবে প্রতিটি টেস্টের জন্য আনুমানিক ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে তা যথাযথভাবে পরীক্ষা না করে ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া ও জাল রিপোর্ট করেছেন।

Advertisement

করোনাকালে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি এবং লকডাউন চলাকালীন ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে শুরু করে ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র তিন মাসে জিকেজি সংশ্লিষ্ট ওভাল গ্রুপ এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ভেলবিল সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৭ টাকা জমা হয়েছে। যা করোনা টেস্টের টাকা মর্মে প্রতীয়মান হয়।

সাবরিনার অন্য অপরাধের বিষয়ে এজাহারে বলা হয়, তিনি প্রতারণা ও জালিয়াতির উদ্দেশ্যে নিজের জন্মতারিখ পরিবর্তন করে দুটো সচল জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়েছেন। তা দিয়ে দুটো ভিন্ন টিআইএন নম্বর খুলেন এবং প্রকৃত জন্মতারিখ ১৯৭৮ কে ১৯৮৩ বানিয়ে তার কর্মস্থলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা অবৈধভাবে গ্রহণের অপচেষ্টা করেছেন।

স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজির বিষয়ে বলা হয়, অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে কোডিডকালীন দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন, ট্রেডলাইসেন্সবিহীন ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর ওভাল গ্রুপের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কোভিড-১৯ এর স্যাম্পল সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে মহাপরিচালক হিসাবে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

আসামির আরিফ তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা প্রভাব কাজে লাগিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে করোনা স্যাম্পল কালেকশন কাজ নেন। টেস্ট ফি হিসেবে টাকা নেওয়ার বিধান না থাকা সত্ত্বেও অর্থের বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া ও জাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন। ও তা সেবাগ্রহীতাদের কাছে সরবরাহ করেছেন। ফলে মহামারি সময়ে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার ঘটেছে ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে।

এসএম/এমএএইচ/জিকেএস